বিশ্বের অন্যতম বড় ম্যানগ্রোভ বন ‘সুন্দরবন’। যে বনকে বলা হয় দক্ষিণ এশিয়ার ফুসফুস ও দুর্যোগ মোকাবিলার ঢাল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করা সুন্দরবন এখন পড়েছে হুমকির মুখে।
সুন্দরবনের দুবলারচর। প্রায় ৮১ বর্গ কিলোমিটারের এ চরে প্রতি বছর নভেম্বরে হয় রাস উৎসব। এ উৎসবে আসেন হাজারো দর্শনার্থী। শতশত ট্রলার চলে বনের নদী ও খালে। উৎসব ঘিরে বসে শতাধিক দোকান। যত্রতত্র ফেলা হয় নিষিদ্ধ পলিথিন ও চিপসের প্যাকেট। এছাড়াও ট্রলারের উচ্চশব্দও বন্যপ্রাণীদের করে আতঙ্কিত।
এমনকি রাস উৎসবে সুন্দরবনের এ চরে হরিণ শিকার করেন অনেকেই। এবছর ৭ হাজার ফুট হরিণ ধরার ফাঁদ উদ্ধার করে বন বিভাগ। পশু শিকারের চেষ্টার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয় ৩২ শিকারিকে।
খুলনা অঞ্চল বন সংরক্ষক ইমরান আহম্মেদ বলেন, ‘মন্দিরে পূজা শেষে সবাইকে পাতলা পলিথিনে করে প্রসাদ দেয়া হচ্ছে। আগে পাতায় বা মাটির পাত্রে প্রসাদ দেয়া হতো। তাহলে আপনি চিন্তা করেন কতো পলিউশন সেখানে হয়েছে। এগুলো বনকে ক্ষতি করছে। কাজেই আমি মনে করি এটি এখান থেকে বন্ধ করা উচিত।’
আরও পড়ুন:
এদিকে, সুন্দরবনের দুবলারচরকে বছরের পর বছর শুটকি প্রস্তুতের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত হাজারো কর্মী এখানে শুটকি তৈরির কাজ করেন। সংরক্ষিত বনের মধ্যে এসব কার্যক্রম বনের জীববৈচিত্র্যর জন্য বয়ে আনছে অপূরণীয় ক্ষতি।
খুলনা অঞ্চল বন সংরক্ষক ইমরান আহম্মেদ আরও বলেন, ‘শুটকিকে কেন্দ্র করে যে পরিমাণে লোকজন এবং জেলেরা এখানে বাস করে, আগে তারা একভাবে থাকত। এখন এলিডি লাইট লাগায়। এখানে প্লাস্টিক, পলিথিনের একটি পলিউশন ঘটে। যেটি এখন সবক্ষেত্রে ছড়িয়ে গেছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে প্রবেশাধিকারের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে বন বিভাগকে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষদের সেখানে যাওয়ার পারমিশন দেয়া হবে। যার ইচ্ছা সেই সেখানে চলে যেতে পারবে না। তাদের হতে হবে প্রশিক্ষিত ট্রেইন্ড। কীভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে ব্যবহার করেতে হবে ঠিক সেটিই করতে হবে।’
পর্যটকদের সঠিক গাইডলাইন না দিয়ে বনে প্রবেশ করতে দেয়া, রাস উৎসব বা শুটকি পল্লীর কার্যক্রম বনের জন্য সুখকর নয়। জীববৈচিত্র্যকে বাঁচাতে হলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে বাঁধতে হবে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে।





