ঝড়, বন্যা আর ভূমিধস- মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে নর্থ আমেরিকার দেশ এল স্যালভাদর। গেল শুক্রবার সোয়াপাঙ্গো শহরে মাটির নিচে চাপা পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় ২ শিশুর মরদেহ। সোয়াপাঙ্গোর গভর্নর এডুয়ার্ডো গোডয় জানান, দেশটিতে এখনও পর্যন্ত ১৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ জনই শিশু। বাস্তুচ্যুত অন্তত ৩ হাজার বাসিন্দাকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
একই পরিস্থিতি গুয়াতেমালায়ও। ভারি বৃষ্টিপাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ঘরবাড়ি, দুইশো'র বেশি সড়ক এবং ২৭টি স্কুল। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন অন্তত সাড়ে ৩০০ বাসিন্দা।
এদিকে কয়েক ঘণ্টার ভারি বৃষ্টিপাতে ভেঙে পড়েছে মেক্সিকোর ওক্সাকা শহরের একটি শিশু হাসপাতালের নিষ্কাশন ব্যবস্থা। বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে বৃষ্টির পানিতে। শহরটিতে বন্যায় আটকা পড়া রোগী ও তাদের স্বজনসহ ৮০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
গেল বৃহস্পতিবার মেক্সিকোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে মৌসুমি ঝড় আলবার্তো। এর প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঞ্চলেও শুরু হয় ভারি বৃষ্টি। মেক্সিকো ও টেক্সাসজুড়ে বন্যা সতর্কতা জারি করে ন্যাশনাল হ্যারিকেন সেন্টার।
হেলিকপ্টারের সাহায্যে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে স্যান্টা ক্যাটারিনা নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দাদের। টানা বৃষ্টিপাতে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে অঞ্চলটির অধিকাংশ এলাকা।
বন্যা কবলিতদের একজন বলেন, 'রাস্তাঘাট ভেসে গেছে। খাওয়ার কিছু নেই, পানি নেই, বিদ্যুতও নেই। যখন বাড়ি ছেড়ে আসলাম ততক্ষণে সব ভেসে গেছে।'
বন্যা আক্রান্ত আরও একজন বলেন, 'বাড়ির সীমানায় পানি ঢুকে পড়ায় সরে যেতে বাধ্য হয়েছি। সামান্য উচ্চতার বাঁধ দিয়েছিলাম কিন্তু পানি সেটাও ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। ছেলেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছে। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসায় নিরাপদে সরে যেতে পেরেছি।'
এখনও পর্যন্ত ৪০ জনকে উদ্ধার করা হলেও আটকে পড়া অন্তত শতাধিক বাসিন্দাকে সরিয়ে নিতে কাজ করছে উদ্ধারকারীরা। রাস্তাঘাট ভেসে যাওয়ায় হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভর করছে উদ্ধার অভিযান। পাশাপাশি খাবার, পানি, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয়রা।
এদিকে ভারি বৃষ্টিপাতে নদ-নদীর পানি উপচে পড়ায় প্রবল বন্যা দেখা দিয়েছে চিলির মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বেশ কিছু শহরে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে কর্তৃপক্ষ। অতিবৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি ও তুষারপাতের আশঙ্কায় আলাদা সতর্কতা জারি রেখেছে কর্তৃপক্ষ। ভোগান্তিতে পড়েছেন নদী তীরের বাসিন্দারা।
তারা বলেন, নদীর পানি উপচে পড়ছে। খালের পানিও বাড়ছে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো তীরবর্তী এলাকার জমি কিনে, মাটি ভরাট করতে গিয়ে নদীর প্রস্থ কমিয়ে ফেলছে। তাই বৃষ্টি হলে সাথে সাথে নদীর পানিতে এলাকাটি প্লাবিত হয়ে যায়।
বিশেষ করে বিও বিও অঞ্চলের বাসিন্দাদের অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছে সরকার। পরিস্থিতি একই রকম থাকলে দেয়া হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে সরে যাওয়ার নির্দেশ।