বন্যা-ভূমিধসে বিধ্বস্ত এশিয়ার চার দেশ, কেবল ইন্দোনেশিয়াতে নিহত ৫০২

ইন্দোনেশিয়ায়  বন্যা পরিস্থিতি
ইন্দোনেশিয়ায় বন্যা পরিস্থিতি | ছবি: সংগৃহীত
0

তীব্র বন্যা, ভূমিধসে বিধ্বস্ত এশিয়ার চার দেশ ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া। এরই মধ্যে এসব দেশে মৃত্যু ছাড়িয়েছে এক হাজার। যার মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপেই মৃত্যু হয়েছে ৫০২ জনের। এছাড়া শ্রীলঙ্কায় প্রাণহানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪০ জনে। বন্যায় থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় মারা গেছেন অন্তত ১৭৯ জন। এসব দেশে এখনো নিখোঁজ শত শত মানুষ। বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে লাখ লাখ মানুষের। এদিকে ভারতের তামিলনাড়ুতে প্রাণহানির পর দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া। ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অফিস।

শ্রীলঙ্কার পর ভারতের তামিলনাড়ুতেও তাণ্ডব চালালো ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া। প্রাণ গেছে বেশ কয়েকজনের। মারা গেছে প্রায় দেড়শ গবাদি পশু। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২৩৪টি কুঁড়েঘর এবং ৫৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে ওঠে এসেছে এ তথ্য।

তাণ্ডব চালিয়ে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া দুর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া দপ্তর। ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত তামিলনাড়ু, উপকূলীয় অন্ধ্র প্রদেশ এবং তেলেঙ্গানার ইয়ানামসহ অনেক জায়গায় বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকারও পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। এতে জারি রয়েছে সতর্কতা।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়া শ্রী ধ্বংসের ছাপ রেখে গেছে শ্রীলঙ্কায়। বন্যা-ভূমিধসে আটকে পড়া বাসিন্দাদের কাছে হেলিকপ্টার দিয়ে সুপেয় পানি ও শুকনো খাবার পৌঁছে দিতে এভাবেই লড়াই করছে দেশটির বিমান বাহিনী। কলম্বোর ঠিক উত্তরের একটি হাসপাতালে আটকে পড়া রোগীদের জন্য খাদ্য বহনকারী একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্তও হয়ে নদীতে পড়েছে। তবে পাঁচ আরোহীকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ভারত থেকে পাঠানো হেলিকপ্টার দিয়েও চলছে উদ্ধার অভিযান। এছাড়া কলম্বোতে ত্রাণ সহায়তা পাঠানোও শুরু করেছে নয়া দিল্লি।

কোনো কিছুতেই বিপর্যয়ের মাত্রা কমছে না শ্রীলঙ্কায়। হুহু করে বাড়ছে প্রাণহানি ও নিখোঁজের সংখ্যা। এরইমধ্যে ৩শ' ৩০ জনের বেশি প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ভয়াবহ এই বন্যা-ভূমিধস। নিখোঁজও প্রায় ৪শ'। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় দিশেহারা ১৩ লক্ষেরও বেশি মানুষ। ২ লাখের বেশি বাসিন্দাকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া সম্ভব হয়েছে। এখনও চারদিকে কেবল বাঁচার আকুতি।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আমরা বন্যার সতর্কতা শুনেছিলাম। কিন্তু আমরা আশা করিনি যে পানির স্তর এত বেড়ে যাবে। জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে উঁচু স্থানেও রেখেছিলাম, কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। সবকিছুই এখন পানির নিচে।

ঘূর্ণিঝড় ডিটওয়ার এই প্রভাবকে শ্রীলঙ্কা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিসানায়েকে। এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন দিশানায়েকে।

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিসানায়েকে বলেন, একটি দেশ হিসেবে, আমরা আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছি। আমরা এটাও স্বীকার করি যে আমরা যা করছি তা আমাদের জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন উদ্ধার অভিযান। এই প্রথমবারের মতো পুরো দেশ এমন একটি দুর্যোগের কবলে পড়েছে।

আরও পড়ুন:

এশিয়ার আরেক দেশ ইন্দোনেশিয়ার অবস্থা আরও নাজুক। এক সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর এখনও দেশটির সুমাত্রা দ্বীপে বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে অধিকাংশ নদীর পানি। বন্যা ছাড়াও ব্যাপক ভূমিধ্বসে প্রাণহানি বেড়ে ৪শ' ৪০ ছাড়িয়েছে। নিখোঁজের সংখ্যাও ৪ শতাধিক। রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ কালভার্ট ভেঙে পড়ায় উদ্ধার অভিযান ও সাহায্য তৎপরতায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। অনেকে বাড়ি-ঘর হারিয়ে হয়েছেন খোলা আকাশের নিচের বাসিন্দা।

তাদের একজন বলেন, এটা আমার বাড়ি ছিল। আমার পরিবারের নয়জন সদস্য এখন বাসস্থানহীন হয়ে পড়েছে। জানিনা আর কত মানুষ আমাদের মতো অবস্থায় আছে। আমাদের গায়ে কেবল কাপড় আছে, বাকি সব শেষ। সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে।

অনেক জায়গায় বন্যার পানি নেমে গেলেও, এখন কাদাপানিতে এমন বেহাল দশা থাইল্যান্ডের। এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় দেশটিতে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণ গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮ লাখের বেশি মানুষ। বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংশ্লিষ্ট দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্তও করেছে সরকার।

ভয়াবহ বন্যায় দোকানে মজুদ থাকা জিনিষপত্র নষ্ট হয়ে যাওয়ায় বিক্রি হচ্ছে কাদামাটিযুক্ত জিনিসপত্রই। বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েই ১০০ বাত মূল্যের জিনিসপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ বাতে।

ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমার স্টক এখন খালি করা ছাড়া উপায় নেই। বন্যায় ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় বিক্রি করে শেষ করতে হবে। অনেক মানুষের কাছে এখন কাপড় নেই, তাই না? তাই আমি সবকিছু সস্তায় বিক্রি করে দিচ্ছি।’

এদিকে মালয়েশিয়ায় হতাহতের সংখ্যা কম হলেও, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ হাজার পরিবারের বসতভিটা। আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে হয়েছ প্রায় ৮০ হাজার মানুষকে। বিদ্যুৎ ও সুপেয় পানির সংযোগ না থাকায় দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।

ইএ