এক সময়ের খরস্রোতা করতোয়া নদীর বর্তমান চিত্র ভরাট হয়ে যাওয়া। নদীর ৭৭ কিলেমিটার অংশ প্রায় ১২২ কোটি টাকায় পুনঃখনন করা হলেও তা কোন কাজেই আসেনি। নদীতে নেই আগের মতো পানি ও মাছ। মাঘের শুরুতে নদীর বালু সমান করে ধানের চারা রোপন করা হয়। কয়েক মাস পরে যে ধান মিলে তাতে কৃষক পরিবারের কয়েকমাস চলে যায়।
ভারত থেকে তেঁতুলিয়া উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে করতোয়া। নদীর প্রায় প্রতিটি ঘাটেই গড়ে উঠেছে হাট বাজার। এক সময় নদীতে চৈত্র বৈশাখেও ছিল দু’কূল ভরা জল। নদী কেন্দ্রিক এক অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল উত্তরের এই জনপদে। তবে গত তিন দশকে শুধু করতোয়া নয় পঞ্চগড়ের তালমা, চাওয়াই, মহানন্দা, পাথরাজসহ প্রায় সব নদী দখল-দূষণে হারিয়েছে জৌলুস।
স্থানীয় একজন বলেন, 'নদী আগে গভীর ছিল তবে এখন পানি নেই, গভীরতাও কমে গিয়েছে।'
জেলে একজন বলেন, 'আগে যারা জেলে ছিল কেউ কেউ মাছ মারছে আবার কেউ কেউ অন্য পেশায় চলে গিয়েছে।'
এছাড়া বেশিরভাগ নদীর উজানে ভারত পানি প্রত্যাহার করে নেয়াকেও দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। অন্যদিকে, নদীর বুকে কৃষিকাজ করায় সার ও কীটনাশকের কারণে হুমকির মুখে নদীর জলজ উদ্ভিদ।
পঞ্চগড়ের উদীচী সভাপতি শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সরকারি খরচে কাজ হচ্ছে তবে দেখা যায় এই প্রজেক্টগুলো বিফলে যায়। কারণ একদিক দিয়ে খনন করলেও অন্যদিক দিয় এতা আবার ভরাট হয়ে যায়।'
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে জেলায় ৩৩ টি নদীর উল্লেখ থাকলেও ৪৬ নদীর অস্তিত্ব পেয়েছেন নদী গবেষকরা। তবে এসব নদীর বেশিরভাগই সমতলের সাথে মিশে গেছে। তাই নদী বাঁচাতে সরকারকে সুষম পরিকল্পনা নেয়ার দাবি সংশ্লিষ্টদের।
পঞ্চগড়ের পরিবেশ পরিষদের সভাপতি তৌহিদুল বারী বাবু বলেন, 'একসময় যে নদী দিয়ে নৌকা চলাচল করেছে সেগুলো কিনতে এখন আর করা সম্ভব না। ফরে দেশের অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়ছে।'
জেলার নদীগুলোর গঠন ও বৈচিত্র নিয়ে এখন একটি সার্ভে চলছে। যেটির প্রতিবেদনের আলোকেই নতুন করে পরিকল্পনা হাতে নেয়ার কথা বলছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
পঞ্চগড়ের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মন বলেন, '৭টি নদী ও ১টি খালের মোট ১৭৮.৫ কিলোমিটার খনন করা হয়েছে। প্রকল্পটির দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০টি নদী ও ১টি খাল খনন করা হবে।'
পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করাসহ সুষম পরিকল্পনা নেয়া হলে করতোয়াসহ পঞ্চগড়ের এসব নদী ফিরে পাবে হারানো জৌলুস।