জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারে বাতাসে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন গ্যাস এবং কালো ধোঁয়ার মিশ্রণে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর উপর। দৃশ্যমান হচ্ছে আবহাওয়ার বিরূপ আচরণ।
এ অবস্থায় কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে শূন্যে নামিয়ে আনতে লড়াই করছে পুরো বিশ্ব। আর শিল্প উৎপাদন ও উন্নয়নের গতি ঠিক রেখে এর মাত্রা কিভাবে কমানো যায় তা নিয়ে চিন্তা ও গবেষণার শেষ নেই বিজ্ঞানীদের। এ আওতায় একদিকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগে প্রবেশের চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জাহাজ চলাচল ছাড়াও যেসব খাত জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়া টিকিয়ে রাখার কথা চিন্তাও করা যায় না সেখানে নেয়া হচ্ছে ভিন্ন ব্যবস্থা।
এরই মধ্যে জাহাজ চলাচলে উৎপন্ন কার্বনকে বাতাসে মিশতে না দিয়ে কিভাবে পাথরে রূপ দেয়া যায় সেই প্রযুক্তির আবিষ্কার করেছে যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠান। নতুন এ কার্বন ক্যাপচার সিস্টেমটি বড় পণ্যবাহী জাহাজের ডেকে ফিট করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যেখানে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হবে না এবং খুবই নিরাপদ বলে দাবি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪০ হাজার টনের বেশি একটি কন্টেইনারবাহী জাহাজে চালানো হয়েছে পরীক্ষামূলক সফল কার্যক্রম। এসময় ক্যালসিয়াম অক্সাইড নুড়ি দিয়ে ভরা একটি চেম্বারের মাধ্যমে জাহাজের একটি সহায়ক ইঞ্জিন থেকে নিষ্কাশন হওয়া গ্যাস সরিয়ে নিয়ে চুনাপাথরে রূপ দেয়। এ প্রক্রিয়াটি কুইকলাইম নামে পরিচিত।
সিবাউন্ডের সহ-প্রতিষ্ঠাতা আলিশা ফ্রেড্রিকসন বলেন, 'ক্যালসিয়াম অক্সাইডের নুড়ি নিষ্কাশন গ্যাসে কার্বনের সাথে বিক্রিয়া করে ক্যালসিয়াম কার্বনেট তৈরি করে, যা চুনাপাথর নামেও পরিচিত। এ ক্ষেত্রে খুব সহজ সারমর্ম হল যে আমরা জাহাজের ইঞ্জিন থেকে তৈরি কার্বনকে চুনাপাথরে রূপ দেব।'
দূষিত কার্বন থেকে উৎপন্ন চুনাপাথরকে আবাসনসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবহারের জন্য কাঁচামাল হিসেবেও বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আর এভাবেই কার্বন নিঃসরণে ৩ শতাংশ দায়ী জাহাজ খাতে আসতে পারে অভাবনীয় সাফল্য। কারণ এর মাধ্যমে প্রতিদিন ৫০ টন কার্বনকে পথরে রূপ দেয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমনকি কার্বন নিঃসরণ রোধে পরিবেশবান্ধব জ্বালানির ইঞ্জিনে জাহাজকে রূপান্তর করার চেয়ে এই প্রক্রিয়াটি সাশ্রয়ী বলে দাবি করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন এই উদ্ভাবনটি জাহাজ খাত ছাড়াও অন্যান্য খাতেও যাতে ব্যবহার উপযোগী হয় তার জন্য চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে উদ্ভাবকরা।
ফ্রেড্রিকসন আরও বলেন, 'আপনি নতুন ধরনের ইঞ্জিনসহ একটি জাহাজ অর্ডার করতে পারেন যা অ্যামোনিয়া এবং মিথানলের মতো জ্বালানি পোড়াতে পারে। কিন্তু এ ধরনের জ্বালানি খুব একটা পাওয়া যায় না। নতুন ইঞ্জিনও খুব ব্যয়বহুল। তাই আমি মনে করি শিপিং শিল্পের জন্য আমাদের এই উদ্যোগ অনেক নমনীয়।'
কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এর আগে ব্লু হাইড্রোজেন বেশ কার্যকর হতে পারে বলে দাবি করে জাপান। এমনকি এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সি ও জাপানের ইনস্টিটিউট অব এনার্জি ইকোনমিকস। তবে সম্প্রতি এনভায়রনমেন্টাল ডিফেন্স ফান্ড এর গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা। যেখানে বলা হয়, ব্লু হাইড্রোজেনের উৎপাদন থেকে শুরু করে ব্যবহার পর্যন্ত নিঃসরণ হতে পারে উচ্চ মাত্রায় হাইড্রোজেন ও মিথেন। যা জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় স্বল্পমেয়াদি বা নিকট ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে তুলবে।