নবম শ্রেণির ক্লাসে 'জীবন ও জীবিকা' বইয়ের 'স্বপ্নের ক্যারিয়ার সাজাই' শীর্ষক তৃতীয় অধ্যায়ের পাঠ্য বিষয়। খোলামেলা আলোচনায় শিক্ষার্থীরা জানাবেন ভবিষ্যতে কোন পেশাকে ভালোবেসে বেছে নিতে চান তারা।
কিন্তু এ ক্লাসের শিক্ষার্থীরা এখন কতটা মনোযোগী? দেশের পট পরিবর্তনের পর নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষায় যখন প্রশাসনে চলছে নানা রদবদল, উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে রাষ্ট্রের সংস্কারের, তখন খবর এসেছে, পরিবর্তন হচ্ছে আলোচিত-সমালোচিত শিক্ষাক্রমও। তাহলে, ২০২৬ সালের এসএসসি'র এই পরীক্ষার্থীরা দশম শ্রেণিতে কোন কারিকুলামের বই হাতে পাবে? কেমন হবে পরীক্ষা কিংবা পড়াশোনার পদ্ধতি? ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার আর পেশা নিয়ে ভাবনা তো দূরের কথা, তারা যেন পাহাড়সম দ্বিধা আর সংশয় নিয়ে বসেছেন শ্রেণিতে।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'এক্ষেত্রে দেখা যাবে আমরা নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবো। আমরা এখনও ক্লিয়ার না যে আমাদের এসএসসি পরীক্ষাটা কোন সিলেবাসে হবে। এক্ষেত্রে যদি আবার পুরোনো কারিকুলামে ফেরত যাওয়া হয়, তখন আমাদের মাঝে একটা বিশাল চাপের সৃষ্টি হবে।'
অভিজ্ঞতা ভিত্তিক এ শিক্ষাক্রমে কতটা অভিজ্ঞ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা? পেপার, পেন্সিলসহ নিয়মিত বিভিন্ন উপকরণ কিনতে ব্যয় বেড়েছে অনেক। বলা হয়েছিল প্রতিযোগিতা নয়, বরং সহযোগিতামূলক হবে নতুন শিক্ষাক্রম। কিন্তু বাস্তবতা হলো নিয়মিত গ্রুপ ভিত্তিক যে কাজ করতে হয়, তাতে এক গ্রুপে সবার অংশগ্রহণ সমান থাকে না।
একজন শিক্ষার্থী বলেন, 'প্রায় ২ জন কাজ করবে না হলে ৩ জন কাজ করবে। বাকিরা কোনো কাজ করবে না, শুধু শুধু নম্বরটা পেয়ে যাবে। একটা হ-য-ব-র-ল ব্যাপার হয়ে যায়।'
নতুন শিক্ষাক্রমের নানা অসংগতিতে অস্বস্তিতে আছেন অভিভাবকরাও। অ্যাসাইনমেন্টের নামে সন্তানের মোবাইল আসক্ত হওয়ার অভিযোগ তো শুরু থেকেই।
একজন অভিভাবক বলেন, 'বইয়ের ভেতরে কীসব আঁকাআঁকি করা হচ্ছে। আবার বাসায় ঠিকভাবে পড়া হচ্ছে না। এই সিস্টেমটা এতো বিরক্তিকর যে বাচ্চারা কিছু শিখতে পাড়ছে না। শুধু মোবাইলে আসক্ত হচ্ছে।'
যারা মাস্টার ট্রেইনার কিংবা শ্রেণি শিক্ষক তারাও ঠিক মতো এই শিক্ষাক্রমের অনেক বিষয়ে স্পষ্ট না। শিক্ষার্থীদের পড়াতে কী কী সমস্যায় পড়তে হয় তাদের?
একজন শিক্ষক বলেন, 'পাঠ্যপুস্তকে অনেক ভুল রয়েছে। তথ্যের অপ্রতুলতা রয়েছে। শিক্ষার্থীরা আসলে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করতে পারবে না।'
কোনো কারিকুলামের মৌলিক উপাদান কারিকুলামের উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, পদ্ধতি এবং মূল্যায়ন। কিন্তু এ চারটি উপাদানের মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতাই 'জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১' এর সবচেয়ে দুর্বলতম দিক বলে মনে করেন শিক্ষাবিদদের অনেকেই। যেখানে সবচেয়ে বেশি বিতর্ক হচ্ছে মূল্যায়ন পদ্ধতি নয়ে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা অনুসদের অধ্যাপক ড. হাফিজ বলেন, 'পুরোনো কারিকুলামকে বেস করে একজন শিক্ষার্থীর পরবর্তী তিন ক্লাসের জন্য চার মাসের একটা বেজিং প্রোগ্রাম তৈরি করে দেয়া, যাতে তারা পরবর্তী ক্লাসে গেলে কোনো ধাক্কা না খায়। এই কারিকুলামকে রিভিশন করে কীভাবে আধুনিক কারিকুলাম করা যায় সে ব্যাপারে দ্রুত একটা লংটার্ম পরিকল্পনা করে তার জন্য কাজ শুরু করা যেতে পারে।'
নতুন শিক্ষাক্রমের দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করে পরিমার্জন- সংস্করণের কথাও বলছেন কেউ কেউ। তবে, কোনো কারিকুলাম বাস্তবায়ন কিংবা বাতিল অথবা পরিমার্জন দীর্ঘ প্রক্রিয়ার বিষয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড বলছে, দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ইতিবাচক হয় শিক্ষাক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্ব এমন কাজই শুরু করছে তারা।