বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৫টি এয়ারলাইন্স তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর এসব এয়ারলাইন্সগুলোর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিচালনা করে বাংলাদেশ বিমান। তবে পার্শবর্তী দেশে ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খরচ বাংলাদশের তুলনা কয়েকগুণ কম। এত টাকা খরচ করেও বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো কতো মান সম্মত সেবা পাচ্ছে? আর কেনই বা বাংলাদেশে এতো বেশি অর্থ গুনতে হচ্ছে?
মূলত উড়োজাহাজ বিমান বন্দরে অবতরণের পর সেটাকে পার্কিং বে’তে নেয়া, যাত্রীদের মালামাল ওঠানো-নামানো, চেকইন কাউন্টারে সেবার মতো কাজ গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। আর এই সেবাটা পুরোটাই দেখভাল করে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ। এজন্যে প্রতি ফ্লাইটে বিদেশি এয়ারবাস থেকে মানভেদে ৬০০ থেকে ২২০০ ডলার নিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান। যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশে ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ অনেক দেশেই ঢাকার চেয়ে অনেক কম খরচে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবা পাচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংটা যারা স্টেকহোল্ডার তারা দাবি করে এখানে একটু বেশি। তো তারা দাবি করে যে এখানে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংটার কম্পেটেটিভ ডেস্ক নাই। এখানে যদি কম্পিটিশন হতো, যদি মাল্টিপল গ্রাউন্ড ডিলার থাকতো তাহলে হয়তো প্রাইসটা কমে আসতো।’
আরও পড়ুন:
তবে, দ্বিগুণ খরচ দিয়েও বিদেশি বিমান সংস্থাগুলো তাদের প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না। ফলে যাত্রীদের কাঙ্ক্ষিত সেবা বাড়তি লোকবল নিয়োগ দিতে হচ্ছে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলোর। বাড়তি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ব্যয়ের প্রভাব শেষ পর্যন্ত গিয়ে পড়ছে সাধারণ যাত্রীর কাঁধে। যার বড় উদাহরণ টিকিট মূল্য। আঞ্চলিক অন্যান্য দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে টিকিট মূল্যে অনেক বেশি। ফলে অনেক যাত্রীই বিকল্প পথ বেছে নিচ্ছে। যেখানে অনন্যা দেশে একাধিক গ্রাউন্ড হ্যান্ডলার সেখানে, ঢাকায় গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং পরিষেবার ওপর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ।
এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ২৪ থেকে ৩০ মিলিয়ন যাত্রীর চিন্তা করছি আগামী ১০ বছরে সেখানে একটা গ্রাউন্ড ডিলার দিয়ে আমাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে গেলে যে অভিজ্ঞতা থাকা দরকার এ অভিজ্ঞতা তো যখন কম্পিটিশন হবে তখন তৈরি হবে। বাইরের দেশে সব গ্রাউন্ড ডিলারের নিজস্ব হ্যান্ডলার আছে।’
এতো এতো অভিযোগের মধ্যেই তৃতীয় টার্মিনালের গ্রাউন্ডহ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বও ২ বছরের জন্য বাংলাদেশ বিমানকে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে একবারে ৮টি বিমানের হ্যান্ডলিংয়ে সক্ষমতা আছে হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের। আর থার্ড টার্মিনাল চালু হলে সেই সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়াবে ২০টি। তাই, প্রশ্ন ছিলো বর্তমানে যেখানে গ্রাউন্ডহ্যান্ডলিংয়ে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে তৃতীয় টারমিনালর জন্য কতোটা প্রস্তুত বাংলাদেশ বিমান?
বাংলাদেশ বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রওশন কবীর বলেন, ‘তৃতীয় টার্মিনালকে কেন্দ্র করে অনেক জনবল নিয়োগ হয়েছে। গত ১ থেকে ২ বছরে অনেক জনবল নিয়োগ হয়েছে। আমাদের সাফিশিয়েন্ট স্টাফ আছে, চেকিং স্টাফ আছে। আমাদের অনেক আগে হয়তো সংকট ছিলো কিন্তু এখন কোনো সংকট নেই। বিশেষ করে তৃতীয় টার্মিনালকে টার্গেট করে আমরা জনবল নিয়োগ দিয়েছি এবং বিমান বাংলাদেশ এখন ক্যাপাবল অন্য এয়ারলাইন্সে জনবল প্রোভাইড করতে।’
এরইমধ্যে, তৃতীয় টার্মিনালের কাজও শেষের পথে। ফলে সেবার মান বাড়ানো না গেলে আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলোকে আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হবে বলে ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা।





