সন্তোষপুর রাবার বনের মাটির রাস্তায় ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে দুই গাড়িয়াল বন্ধু জলিল আর আলালের ছুটে চলা প্রায় ২ যুগের বেশি সময়। দুর্গম হওয়ায় এই জনপদের শস্যসহ বিভিন্ন পণ্য সরবরাহে ঘোড়া এবং মহিষের গাড়িই ভরসা।
আগে কাঠের চাকায় ঘোড়া গাড়িগুলো চললেও এখন চলে গাড়ির ফেলে দেয়া পুরনো টায়ারে। বছরে অন্তত দুবার বদলাতে হয় চাকার জোড়া। তবে আগের থেকে প্রতি চাকায় দাম বেড়েছে ৪শ' থেকে ৫শ' টাকা। বাড়তি দামে বেকায়দায় এখানকার বেশিরভাগ গাড়িয়াল।
বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহনের বিকল্প নেই। যে চাকার উপর ভর করে চলছে দেশের অর্থনীতি, সেই চাকার বাজার এখন অনেকটাই টালমাটাল।
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাবারের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে টায়ারের দামে। ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেড়েছে সাইকেল, রিকশা, ভ্যানসহ সব ধরনের যানবাহনের নতুন চাকার দাম।
এ অবস্থায় মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি বেসরকারি একটি টায়ার কারখানায় আগুনে সব পুড়ে যাওয়া। এতে আরেক দফা বেড়েছে দাম।
এ অবস্থায় চাহিদা বেড়েছে পুরনো চাকার। ময়মনসিংহের রেলির মোড় এলাকায় মাসে প্রায় বিক্রি হয় কোটি টাকার পুরনো টায়ার। এতে প্রতি পিসে দাম বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশ।
বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের ১৮টি রাবার বাগান রয়েছে। যারমধ্যে ১ হাজার ৭৬ একর জায়গা জুড়ে সন্তোষপুর রাবার বাগান। বিগত সময় বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, রাবার পাচারসহ অদক্ষ টেপার দ্বারা গাছ টেপিং করায় উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়েছে এ বাগানের অর্ধেক গাছ।
বিশ্ব খাদ্য কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রাবার উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে থাইল্যান্ড। সবচেয়ে বেশি রাবার চাষ হয় ইন্দোনেশিয়ায়। এমন জায়গায় বাংলাদেশের অবস্থান একেবারেই তলানিতে।
তবে অপার সম্ভাবনাময় এই শিল্পটি বিকশিত করতে উন্নত প্রযুক্তিসহ আলাদা রাবার ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘যে সমস্ত দেশে রাবার শিল্প বেশি বিকশিত হয়েছে, সেসব জায়গায় আমাদের রিসোর্স পার্সনদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে পারি। তারা সেখান থেকে এসে যে লব্ধ জ্ঞান আমাদের এখানে ইমপ্লিমেন্ট করে অবশ্যই আমরা ভালো করতে পারবো।’