সিলেট-ঢাকা রেলপথে দুর্ভোগের শেষ নেই

.
এখন জনপদে , পরিষেবা
অর্থনীতি
0

সিলেটের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার রেল যোগাযোগ বলতে গেলেই প্রথমেই আসে ভোগান্তির কথা। জরাজীর্ণ রেললাইন, ভঙ্গুর সেতু আর নাজুক কোচ, এই নিয়েই চলছে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের যাত্রীসেবা। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, বাড়ছে প্রাণহানি। নানা সময়ে ডুয়েল গেজ বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করলেও অর্থায়নের অভাবে সেটি আর পূরণ হচ্ছে না বলছেন রেলের মহাপরিচালক।

১৭৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সিলেট-আখাউড়া রেলপথে প্রতিদিন ৬ জোড়া আন্তঃনগর, ৮ টি লোকাল ও কয়েকটি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে। ছোট-বড় মিলিয়ে আড়াইশটিরও বেশি সেতু রয়েছে এই রুটে। বেশিরভাগই নির্মিত হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ বছর আগে। কাঠের স্লিপারগুলো ভেঙে যাওয়ায় ট্রেন চলাচলে বাড়ছে ঝুঁকি।

সিলেট থেকে ঢাকা রেলপথে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার যাত্রী চলাচল করেন। কিন্তু চাহিদা দ্বিগুণেরও বেশি। শিডিউল বিপর্যয়, চলন্ত পথে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, টিকিট কালোবাজারি, হকারদের উৎপাত সব মিলিয়ে দুর্ভোগ যেন নিত্যদিনের ঘটনা।

যাত্রীদের একজন বলেন, ‘সময়টা অনেক বেশি লাগে।’

আরেকজন বলেন, ‘রেললাইন বাড়ানো দরকার, রেল সংযোজন করা দরকার আরো।’

হিসেব বলছে, দেশের অন্যসব রুটের তুলনায় সিলেট রুটেই সবচেয়ে বেশি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়। শুধু তাই নয়, জরাজীর্ণ ব্রিজ ভেঙে কোচ পড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে একাধিকবার। প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রবাসী আয়, গ্যাস, তেল, চা ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ সিলেট। অথচ সেই সিলেটেই রেলপথের এমন বেহাল অবস্থা। যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পরিবহন সেবাকে হুমকির মুখে ফেলছে বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ।

সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মো. মাহদী সালেহীন বলেন, ‘অনেক পণ্য আছে যেটা সিলেট আসে না চিটাগং আসে। সিলেট আসতে হলে চিটাগং থেকে বাই রোডে আসতে হয়। এর ফলে ট্রাকে অনেকগুলো কনটেইনার আনা যায়। ট্রেনে আসলে তা একসঙ্গে বসিয়ে আনা যেত।’

২০২০ সালে সিলেট-আখাউড়া রেলপথের উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৬ হাজার কোটি টাকার ডুয়েলগেজ প্রকল্পে অর্থায়নের আশ্বাস দিলেও পরে চীনা কোম্পানি সরে আসায় বাস্তবায়ন আটকে আছে বলে জানান রেলের মহাপরিচালক ।

বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন, ‘এখন তারা বড়ধরনের বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে না। যার ফলে আমরা অবকাঠামো উন্নয়নে যে সুবিধা সেটা আপাতত নিতে পারছি না।’

সিলেটের রেলপথ উন্নয়নে বিভিন্ন সময় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলেও তা শুধু মন্ত্রণালয়েই ঘুরপাক খায়। বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই তা নতুন পরিকল্পনায় হারিয়ে যায় বলে মনে করে ক্ষুব্ধ সিলেটবাসী।

বিগত ৫০ বছরে সিলেটের রেলে লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া । বহুবার প্রতিশ্রুতি ছিল পুরো রেলের সঙ্গে সমান তালে এ পথের উন্নয়ন হবে কিন্তু প্রতিশ্রুতি প্রতিবারই ভাওতায় পরিণত হয়েছে । তাই আর কোন প্রতিশ্রুতি নয় বরং যোগের সাথে তাল মিলিয়ে রেল সেবার মান উন্নয়ন চান এই অঞ্চলের কোটি মানুষ ।

ইএ