তৈয়ব আলী নামের এক শ্রমজীবী একটি ফিচার মোবাইল ব্যবহার করেন শুধু পরিবারের খবর নেয়ার জন্য। কিন্তু তার খরচ কতো ? তিনি বলেন, 'বাড়িতে পরিবারের সাথে কথা কই। আগে ৪৯ টাকা লোড দিলে ৬-৭ দিন যাইতো। আর এখন দুইদিনই যায় না।'
শুধুমাত্র এই নিম্নবিত্তদের জন্যই নয়, মুঠোফোনের বাড়তি খরচের বোঝা মধ্যবিত্তদের উপরও প্রভাব ফেলছে। এতে অন্যান্য খরচের সঙ্গে মুঠোফোনের অতিরিক্ত খরচ তাদের জন্য বোঝা।
এক গ্রাহক বলেন, 'এখন ব্যয় বাড়ার কারণে আমরা রিচার্জ করে কথা বলি না। মিনিট কার্ড কিনে কথা বলতে হয়। আগে প্রতি মিনিট ২৫ পয়সা ছিল আর এখন ১ টাকার উপরে।'
আর উচ্চবিত্তদের জন্য সে হিসাব না থাকলেও তারা টের পান আগের থেকে মুঠোফোনের খরচ বেড়েছে।
মুঠোফোনে এতো খরচের পেছনের কারণ কী? পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১০ শতাংশের মধ্যে কর নেয় মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর। প্রতিবেশি দেশ ভারত নেয় ১৮ শতাংশ কর, আর শ্রীলঙ্কা ২৩.৫ শতাংশ ও নেপালের কর ২৬.২ শতাংশ। গত অর্থবছর পর্যন্ত পাকিস্তান সবচেয়ে বেশি ৩৪.৫ শতাংশ কর নিলেও এবারের বাজেটে কর নেয়ার দিক থেকে সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক ও সারচার্জ মিলে ১০০ টাকা ব্যবহারে প্রায় ৩৪ টাকা গ্রাহককে দিতে হতো। কিন্তু এ বাজেটে আরও ৫ টাকা সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবনায় এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩৯ টাকায়। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
মুঠোফোন কোম্পানিগুলো বলছে, এসব চার্জের কারণে এ বছরও ভোক্তার মুঠোফোনের খরচ বাড়বে। এতে করে কোম্পানি পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
রবি'র চিফ কর্পোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার মো. সাহেদুল আলম বলেন, 'আমাদের শুল্ক বেশি হওয়ার কারণে মানুষের উপর চাপটা অনেক বেশি পড়ছে। সবশেষ গ্রাহকদের উপর এর প্রভাব পড়বে। যে কারণে ভবিষ্যত বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।'
মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর সংগঠন অ্যামটবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ বলেন, 'দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে এতো পরিমাণ চার্জ, মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর স্বাধীনভাবে ব্যবসা করার অন্তরায়।'
সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর জন্যই মূলত এ খাতে করারোপ করা হয়। তবে জনগণের জন্য যেটা ভালো সেটা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ জানান বিটিআরসির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, 'আমাদের দেশের গ্রাহকদের সামর্থ্যটা দেখতে হবে। কীভাবে তাদের খরচ কমানো যায় সেটা সরকারের লক্ষ্য।'
খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লে জিডিপি বাড়ে ১ শতাংশ। এমন কথা বিশ্বব্যাংক বললেও দেশে সেটা মানা হচ্ছে না। তাই এ খাতে সরকারকে সুদৃষ্টি দিতে হবে।
টেলিকম খাত বিশেষজ্ঞ টি.আই.এম নুরুল কবির বলেন, 'ট্যাক্স বসানোতে আমরা তৃণমূল পর্যারের মানুষের কাছে এটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য হবে না। বিশ্বব্যাংক বলছে ১০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার বাড়লে জিডিপি ১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।'
সাধারণত কোনো খাতকে অনুৎসাহিত করার জন্য সারচার্জ যুক্ত করা হয়। তাহলে কেন টেলিকম খাতে ওপর সারচার্জ যুক্ত করছে সরকার, এমন প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।