চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রিপেইড বিদ্যুৎ মিটারের গ্রাহক প্রায় ৯ লাখ। তাদেরই একজন নগরীর রাহাত্তারপুলের ওষুধ ফার্মেসির মালিক রাশেদ। জানান, ৫ বছর আগে দোকানে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার লাগানো পর থেকে আছেন নানা রকম বাড়তি বিলের বিড়ম্বনায়। প্রতিমাসে বিলের পাশপাশি ডিমান্ড চার্জ, মিটার ভাড়া যোগ হয়ে বিলের বোঝা চাপে ক্ষুদ্র ও দোকানির ঘাড়ে। তার মতো একই অবস্থা অনেকের।
ওষুধ বিক্রেতা রাশেদ বলেন, 'প্রিপেইড মিটার করার পর থেকে ১ টা ফ্যান আর দুইটা লাইটে প্রতিমাসে দেড় হাজার টাকা লাগে। অনেক সময় আরও বেশি লাগে। সেদিন ৬০০ টাকা রিচার্জ করলাম, সাথে সাথে ৩৩৬ টাকা কেটে নিয়ে গেছে।'
আবাসিকে নতুন প্রিপেইড মিটার সংযোগ নিতে গুনতে হয় ৫ হাজার ২০০ টাকা। বাণিজ্যিক পর্যায়ে ২৪ হাজার। তাদের অভিযোগ, টাকা দিয়ে মিটার কেনার পরও প্রতিবার রিচার্জে মিটার ভাড়া কাটা হয়, তাছাড়া ভ্যাট দেয়ার পরও ডিমান্ড চার্জের যৌক্তিকতা খুঁজে পান না তারা। এমন ভোগান্তির মাঝে বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে টাকা রিচার্জে ১৮০ থেকে ২৪০ ডিজিটের নম্বর। বিদ্যুৎ বিভাগে এসব নিয়ে বারবার অভিযোগ করেও প্রতিকার না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা।
তারা বলেন, মিটার লক হয়ে যায়। এর জন্যও ভ্যাট কাটতেছে। এটার জন্যও তারা ১০০০-১৫০০ টাকা চার্জ নিয়ে যায়। তিন বারের বেশি পিন ভুল হলে মিটার লক হয়ে যায়। এর টোকেন অনেক লম্বা। প্রথম ২০ টা ডিজিট দেয়ার পর আবার ২০ টা করে দিতে হয়। ৩৪ টাকার জায়গায় মিটারর চার্জ এখন ৮৪ টাকা। আবার মিটার ভাড়াও দিতে হয়।
চট্টগ্রাম শহরের বাইরে হাটহাজারীর গ্রাম ফতেপুর। এখনও শহরের মতো শিক্ষিত বা সচেতন নন গ্রামের গ্রাহকরা। অনেকেই আছেন বয়োবৃদ্ধ, যাদের নেই ডিজিটাল জ্ঞান। তাদের অভিযোগ মিটারে অনেক ডিজিট ইনপুট দিতে হয়। এতে বিপত্তি বাঁধিয়ে ফেলেন। পরপর তিনবার ভুল করলে মিটার লক হয়ে যায়। বিদ্যুৎ অফিসের লোক এসে ঠিক করে দিতে লেগে যায় এক থেকে দুইদিন। তার জন্যও দিতে হয় সার্ভিস চার্জ। প্রিপেইড মিটার তাদের কাছে ভোগান্তির যন্ত্র।
বাসিন্দারা বলেন, আগে প্রতিমাসে বিল দিয়ে দিতাম কোনো ঝামেলা ছিল না। এখন মাঝরাতে কার্ডের টাকা শেষ হয়ে যায়। এতে ভোগান্তি বাড়ে। ডিমান্ড চার্জের নামে অনেক টাকা নিতেছে। বলছিল মিটার ফ্রি দিবে কিন্তু দেয় নাই।
গ্রাহকদের এতসব ভোগান্তি আর অভিযোগকে প্রিপেইড মিটার সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব বলেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। আগের ভুতুড়ে বিলিং সিস্টেম থেকে এটি অনেক বেশি গ্রাহক বান্ধব। বর্তমানে নতুন স্মার্ট মিটার দেয় হচ্ছে, এ মিটারে আগের মতো ২০০ ডিজিট ইনপুট দেয়ার প্রয়োজন হবে না বলে জানান তারা।
বিউবো বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী হুমায়ূন কবির মজুমদার বলেন, 'প্রথম ২ হাজার টাকা দিয়ে মাসের প্রথম ১৫ দিন যায়। কিন্তু পরের ১৫ দিন আর ২ হাজার টাকায় যাচ্ছে না। কারণ বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহারের কারণে বিলও সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাটছে। এক টাকাও অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে না।'
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলায় বিদ্যুতের মোট গ্রাহক ১৬ লাখ ২৮ হাজার। বর্তমানে ৬০ শতাংশ গ্রাহক এসেছে প্রিপেইড মিটারের আওতায়।