আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিপিসির লোকসান হয় ২ হাজার কোটি টাকা। সে লোকসান কাটাতে ২০২২ সালের আগস্টে একলাফে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয় ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম।
এছাড়া গেল ৯ বছরের ৭ বছরই ৪৪ হাজার কোটি টাকার বেশি লাভ করেছে বিপিসি। এতো লাভের পরেও ৬ বছরে তেলের দাম কমেছে মাত্র একবার, যেখানে লিটারপ্রতি ভোক্তার সাশ্রয় হয়েছে মাত্র ৫ টাকা।
লাভ-লোকসানের এ হিসাব থেকে বের হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মিল রেখে বাংলাদেশেও জ্বালানি তেলের দাম নিয়মিত সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত প্রথমবারের মতো বাস্তবায়ন করলো সরকার। এতে ভোক্তার সাশ্রয় হচ্ছে ডিজেলে ৭৫ পয়সা, অকটেনে ৪ টাকা ও পেট্রোলে ৩ টাকা। যা বৃদ্ধির তুলনায় বরাবরের মতোই নগণ্য।
বিপিসি বলছে, সর্বশেষ ১০৯ টাকা বিক্রয়মূল্যের প্রতি লিটার ডিজেল থেকে আমদানি ও প্রক্রিয়াকরণের খরচ বাদে তাদের লাভ ৪ টাকা। অর্থাৎ সেবাদানকারী রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠান বিনা লাভে বিক্রি করলে চার টাকা দাম কমাতে পারতেন তারা। সেখানে কমেছে ৭৫ পয়সা।
আর বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে ডিজেলের চাইতে অকটেনে ১০ টাকা বেশি রাখার কথা থাকলেও ব্যবধান রাখা হয়েছে ১৮ টাকা আর পেট্রোলে ১৫ টাকা। যদিও নিজস্ব সক্ষমতার জ্বালানি হিসেবে পেট্রোল-অকটেন থেকে লভ্যাংশ কখনোই স্পষ্ট করেনি সংস্থাটি।
![](https://images.ekhon.tv/shamsul alam.webp)
এখন টিভির সাথে কথা বলছেন ড. এম শামসুল আলম
সেবাদানকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিপিসি নিজেদের অযাচিত ব্যয় না কমালে কখনোই জ্বালানির মূল্য যৌক্তিক হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম বলেন, 'বিপিসি ও পেট্রোবাংলা সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদেরকে সেবা দেয়ার কথা হচ্ছে কস্ট প্রাইসে। যা ব্যয় হবে তা দিতে হবে। এভাবে ব্যয় বৃদ্ধি হলো, তার ওপরে আবার তাদের মুনাফা। সরকার জ্বালানি সেবা দিতে গিয়ে তাদের ব্যবসায়ী চরিত্রের শিকার।'
একই সঙ্গে রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে প্রকাশ্যে জ্বালানির যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ না করলে ভোক্তার অধিকারও নিশ্চিত হবে না বলে মত তার।
শামসুল আলম বলেন, 'নূন্যতম ব্যয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ভোক্তা পর্যায়ে প্রাপ্তির নিশ্চিত করতে হবে, যার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মূল্যহার নির্ধারণটা যৌক্তিক ও ন্যায্য হতে হবে এবং তা হচ্ছে কিনা সেটা ভোক্তাকে বুঝতে দিতে হবে।'
দেশে সব ধরনের জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রতি বছর গড়ে ৭০ লাখ মেট্রিক টন, যার ৯০ শতাংশ আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে ডিজেল ৭০ শতাংশ, যার পুরোটাই আমদানি করা হয়। আর অকটেন আমদানি করতে হয় মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ। পেট্রোল আসে নিজস্ব সক্ষমতা থেকে।