মেগা প্রকল্পের যোগাযোগ সুবিধায় নতুন অর্থনৈতিক করিডোরের সম্ভাবনা

পরিষেবা
অর্থনীতি
0

মেগা প্রকল্পগুলো থেকে আয় বাড়ছে সরকারের। গত তিন চার বছর ধরে দেশে এক এক করে চালু হয়েছে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প। যার সুফল পেতে শুরু করেছে নাগরিকরা। বিশেষ করে যোগাযোগ খাতে ফিরেছে গতি। পাশাপাশি মেগা প্রকল্পের টোল ও যাত্রীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ভাড়া থেকে দিন দিন বাড়ছে সরকারের আয়ও।

স্বাধীনতার পর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্জন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। যা গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় ২০২২ সালের জুনে। এরপর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যাতায়াতে দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড।

পদ্মা সেতুতে ২০২৩ এর ১০ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচলও শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, রেলের পাশাপাশি এ পর্যন্ত মাওয়া প্রান্ত থেকে ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ও জাজিরা প্রান্ত থেকে ৫১ লাখ ৫৪ হাজার গাড়ি সেতু পাড়ি দিয়েছে। যেখান থেকে টোল আদায়ে সরকারের আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৭০ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

দেশের আরেক মেগা প্রকল্প মেট্রোরেলের মাধ্যমে ঢাকায় কিছুটা হলেও গতি ফিরেছে। প্রথমদিকে উত্তরা-আগারগাঁও রুটে কিছুটা যাত্রীচাপ কম থাকায় প্রথম ছয় মাসে মেট্রোরেল থেকে সরকারের আয় হয়েছিল ১৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা।

তবে গত নভেম্বরে মতিঝিল পর্যন্ত চালুর পর এখন প্রতিটি মেট্রোরেলেই যাত্রীতে ঠাসা থাকছে। ডিএমটিসিএলের তথ্য বলছে, বর্তমানে প্রতিদিন মেট্রোরেলে প্রায় পৌনে তিন লাখ যাত্রী চলাচল করছে। সে হিসাবে এখন গড়ে প্রতিদিন আয় হচ্ছে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা করে।

একইভাবে দিন দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে ঢাকার প্রথম উড়াল সড়ক বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েরও। যেখানে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা আর টোল থেকে বাড়ছে সরকারেও আয়ও। এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, চালুর পর প্রথম মাসে টোল থেকে আয় হয়েছিল ৬ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। সবশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে আয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা। যা চালুর পর এখন পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে থেকে মোট আয় হয়েছে ৫০ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

এছাড়া গত বছর ২৮ অক্টোবর নদীর তলদেশ থেকে নির্মিত দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেল দিয়ে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। সরকারি তথ্যানুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর টানেল থেকে এ পর্যন্ত গাড়ি পারাপার হয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার। আর টোল থেকে আয় হয়েছে ১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

আর সম্প্রতি ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চালু হওয়া রেল থেকে সরকারের আয় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

এছাড়া গত বছর ৭ অক্টোবর আংশিকভাবে উদ্বোধন হয় শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল। যেখানে এ বছরের শেষদিকে বিমান ওঠানামা ও যাত্রীরা ব্যবহার শুরু করতে পারবেন। সব মিলিয়ে চালু হওয়া এসব মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি।

যোগাযোগ বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থার মধ্যদিয়ে এসব মেগা প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। তবে তারা বলছেন, এসব বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প কখনোই শুধুমাত্র এই দ্রুতগতির যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নয়। বরং বাংলাদেশের সামগ্রিক টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য করা হয়। তাই এখন তারা বলছেন, এসব মেগা প্রকল্প ঘিরে আরও অনেক বেশি নতুন নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও শিল্প কলকারখানা নির্মাণ করা উচিত। যা এখনও কাঙ্ক্ষিতভাবে শুরুই হয়নি বলে দাবি তাদের।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব মেগা প্রকল্প বেশিরভাগই বিদেশি ঋণে করা। যার মধ্যে কয়েকটির ঋণ পরিপক্ক হওয়ায় কিস্তিও দেয়া শুরু হয়েছে। তবে টোল বা যাত্রীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থ কখনই সেই ঋণ পরিশোধের মূল উৎস হবে না জানিয়ে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জিডিপিতে এর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে হলে এসব করিডোরকে অর্থনৈতিক করিডোরে রূপান্তর করতে হবে।

এছাড়া মেগা প্রকল্প থেকে আরো কম সময়ে বেশি অর্থনৈতিক সুফল পেতে হলে নির্মাণ ব্যয় ও সময় কমানো দরকার বলে মনে করেন যোগাযোগ বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা।

এসএস