সীতাকুন্ড সমুদ্র উপকূলের প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গড়ে উঠেছে বিশ্বের বড় জাহাজ ভাঙার কারখানা। এখানকার শতাধিক ইয়ার্ডে বছরে লেনদেন প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। গড়ে ২০০টি বড় জাহাজ ভাঙ্গা হয় এই ইয়ার্ডগুলোতে।
দেশে লোহা জাতীয় শিল্পের কাঁচামালের ৫০ শতাংশের যোগানদাতা এসব শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। বর্তমানে ইস্পাত শিল্পের প্রায় ৩৫০টি কারখানা সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে এই জাহাজ ভাঙ্গা কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে। সম্ভাবনার এই খাতকে এগিয়ে নিতে এবং আন্তর্জাতিক মানের করতে কাজ শুরু করে ইয়ার্ড মালিকরা।
জাহাজ কাটা থেকে শুরু করে লোড-আনলোডে যোগ হচ্ছে অটোমেশন, ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি এবং ছোট-বড় ক্রেনের। আর এসবের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলছে পরিবেশবান্ধব গ্রিন শিপ ইয়ার্ড হিসাবে। এতে প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়ছে কয়েকগুণ।
কে আর শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তছলিম উদ্দিন বলেন, 'আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে গ্রিন শিপগুলো আমরা স্বল্প দামে পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। প্রতিযোগিতায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সাথে আমরা টিকে থাকতে পারবো। এর প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।'
তবে ২০২৫ সালের মধ্যে সকল ইয়ার্ডকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তরের যে নির্দেশনা তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলছেন এ খাত সংশ্লিষ্টরা। এক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিবন্ধকতাকে বড় করে দেখছেন তারা।
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইকেলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ তাহের বলেন, 'একটি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডকে গ্রিন করতে হলে খরচ পড়ে ৩০ থেকে ৫০ কোটি টাকা। আমাদের ৪টা গ্রিন ইয়ার্ডে হয়ে গেছে। ১০-১২ টার মতো প্রক্রিয়াধীন আছে। আশা করি দ্রুতই হয়ে যাবে।'
শুক্রবার সীতাকুণ্ড কে আর গ্রীন শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড পরিদর্শন করে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অরগানাইজেশনের মহাসচিবসহ একদল প্রতিনিধি। এসময় শিপ রিসাইক্লিং এ হংকং কনভেনশন শর্ত বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা।
আর্সেনিও অ্যান্টোনিও ডোমিনগেজ ভেলাসকোস বলেন, 'আমি জানি এ কাজ খুবই চ্যালেঞ্জিং। তবে তাদের অগ্রগতি দেখে আমি সন্তুষ্ট। শ্রমিকদেরকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের আওতায় রাখতে হবে এবং সেই সাথে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আইএমও সবসময় বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাবে।'
দেশে বর্তমানে ৪টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গ্রিন ইয়ার্ডের স্বীকৃতি পেয়েছে। বাস্তবায়নের পথে রয়েছে আরও ১০টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। গ্রিন ইয়ার্ডের স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোক্তারা ইতোমধ্যে সুফল পেতে শুরু করেছেন। বিশ্বের নামিদামি জাহাজ প্রতিষ্ঠানগুলো এসব ইয়ার্ডে জাহাজ পাঠাতে শুরু করেছেন।