আলো আঁধারের ছোট-বড় তাঁত শাড়ির কারখানায় এখন কারিগরদের ব্যস্ততা। ভোর থেকে চলছে মাকু আর শানার ঠোকাঠুকির শব্দ। তাঁতির হাত ও পায়ের ছন্দে তৈরি হচ্ছে এক একটি বর্ণিল শাড়ি।
গরমের কথা মাথায় রেখে টাঙ্গাইলের শাড়িতে এসেছে বৈচিত্র আর নতুনত্ব। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ক্রেতাদের ভিড় এখন তাঁত পল্লীতে। অর্ডার অনুযায়ী শাড়ির যোগান দিতে রাতদিন কাজ করে যাচ্ছেন কারিগররা।
টাঙ্গাইল শাড়ির কারিগররা জানান, ঈদ এবং পহেলা বৈশাখের জন্য কিছু কাজ পেয়েছি। মান ভেদে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে শাড়ি তৈরি করা হচ্ছে। এখন তৈরি করা হয় সুতি, সিল্কের শাড়ি।
আগে মজুরি বেশি ছিল বলে জানান তারা। বলেন, এখন মজুরি যেমন কমে গেছে তেমনি খরচও বেড়ে গেছে।
তাঁতপল্লীর শোরুমগুলোতেও বেড়েছে ঈদের ব্যস্ততা। টাঙ্গাইল শাড়ি কিনতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরা ক্রেতারাও আসছেন। শাড়ির মান ও দামে সন্তুষ্ট তারা।
এক ক্রেতা জানান, 'টাঙ্গাইলের শাড়ির কোয়ালিটি অনেক ভালো। কোনো গর্জিয়াস পার্টিতে এই শাড়ি ভালো দেখায়।'
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার সুতি, সিল্ক, হাফ সিল্ক শাড়ি বেশি চলছে। কয়েক বছরের চেয়ে এবার বেচাকেনা ভালো বলেও জানান তারা। ঈদ এবং গরমকে টার্গেট করে সফ্ট কালার দিয়ে শাড়ি তৈরি করা হয়েছে এবার।
ঈদ-পহেলা বৈশাখ ঘিরে জেলায় প্রায় ৪শ' কোটি টাকার টাঙ্গাইল শাড়ি বিক্রির আশা ব্যবসায়ীদের। এছাড়া, গত বছর ৭৪ লাখ পিস টাঙ্গাইল শাড়ি প্রতিবেশী দেশ ভারতে রপ্তানি হয়েছিল। আয় হয়েছিল প্রায় ২৬ লাখ ডলার। এবার রপ্তানির জন্যও উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে কয়েকগুণ।
টাঙ্গাইল জেলার শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, 'ঈদের দুইদিন পরেই যেহেতু পহেলা বৈশাখ। যার ফলে আমরা উৎপাদন একটু বাড়িয়ে দিয়েছি। পাশাপাশি বিক্রি আমাদের বেশি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।'
টাঙ্গাইলের চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক পলাশ চন্দ্র বসাক বলেন, 'পাইকারিতে আমাদের বিক্রি অনেক ভালো হয়েছে। ৩শ' থেকে ৪শ' কোটি টাকার মতো ব্যবসা হবে আশা করছি।'
জেলার বাজিতপুর, কৃষ্ণপুর, বেলতা, পুটিয়াজানি, কালিহাতীর বল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় শাড়ি উৎপাদন হলেও মূলত দেলদুয়ারের পাথরাইল টাঙ্গাইল শাড়ির রাজধানী হিসেবে খ্যাত।