নিম্নমুখী রপ্তানি বাজার; বিশ্ববাজারে পিছিয়ে পড়ছে পোশাক খাত

পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা
পোশাক কারখানায় কাজ করছেন শ্রমিকেরা | ছবি: এখন টিভি
0

চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা কারণে নিম্নমুখী দেশের রপ্তানি বাজার। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্ববাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে দেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় তৈরি পোশাক খাত। মূলত তৈরি পোশাক নির্ভর রপ্তানি খাতের বহুমুখীকরণে কেটে গেছে পাঁচ দশক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ খাতের নতুন বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়াতে ইপিবি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে।

মার্কিন শুল্কনীতি, রপ্তানিতে চীন–ভারতের আগ্রাসী কৌশল, টানা তিন মাসের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং গেল ১৪ মাসে ৩৫৩টি কারখানা বন্ধ—সবমিলিয়ে যখন রপ্তানি খাত নিম্নমুখী, তখন নতুন করে আলোচনায় রপ্তানির বহুমুখীকরণ বিষয়টি।

প্রায় ছয় দশক ধরে দেশের রপ্তানি উন্নয়নে কাজ করছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবি। তাদের তথ্য বলছে, ২০২৩–২৪ অর্থবছরে সার্বিক রপ্তানি ৪৪ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার, এর মধ্যে রেডিমেড গার্মেন্টস খাতেরই হিস্যা ৩৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। সবশেষ অর্থবছরে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির আয়ের মধ্যে পোশাক খাতের অবদান ৩৯ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে গেল ২ অর্থবছরের অন্যান্য খাতের রপ্তানি আয় মাত্র ১৭ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলারের।

চলতি জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে হোম টেক্সটাইল খাতে রপ্তানি ২৭৯ দশমিক ০৮ মিলিয়ন ডলার। একই সময়ে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে এসেছে ৪১৩.৫০ মিলিয়ন ডলার। আর হিমায়িত ও জীবন্ত মাছসহ কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি ৫৫৬.৮২ মিলিয়ন ডলারের।

সাধারণ রপ্তানিকারকরা জানালেন, বিমান ভাড়া, অপ্রতুল লজিস্টিক ও রপ্তানিবান্ধব পরিবেশসহ নানা চ্যালেঞ্জের কথা।

এ ওয়ান কম্পোজিট লেদারওয়ার লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রণোদনার পরিমাণটা উনারা কমিয়ে দিয়েছেন। আর আমাদের এখানে ম্যাটারিয়াল যেমন- ব্যাগ, জুতা দুইটারই এক্সেসরিজের জন্য আমরা বাইরের দেশের ওপর নির্ভরশীল।

আরও পড়ুন:

কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের এক্সপোর্টররা যদি বিমান ভাড়াটা কম পেতো এবং বিমানের স্পেসটা নিশ্চয়তা থাকতো তাহলে আমাদের এক্সপোর্ট অনেক বেশি বেড়ে যেতো।’

প্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছরে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ৩ দশমিক ০২৭ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় স্থানে যুক্তরাজ্য—রপ্তানি ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা জার্মানি ও স্পেনে রপ্তানি ১ দশমিক ৬৬ ও ১ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার। ৮৪২ দশমিক ৩৪ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছে নেদারল্যান্ডসে।

এদিকে অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে চার মাসে অস্ট্রিয়ায় রপ্তানি ১৭৯ দশমিক ৫১ মিলিয়ন ডলার। তুরস্কে ১৬৮ দশমিক ২৯ ও ব্রাজিলে রপ্তানি ১৬৪ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার। তবে ৯০টির বেশি দেশ, রপ্তানির ১ মিলিয়ন ডলারের ক্লাবে নেই।

রপ্তানি বিশেষজ্ঞ ফুয়াদ এম খালিদ হোসেন বলেন, ‘ইমপোর্টিং কান্ট্রির যে কম্পাইল রিকোয়ারমেন্টগুলো সেগুলো আমরা মিট করতে না পারার কারণে আমরা আমাদের ট্র্যাডিশনাল মার্কেটের বাইরেও যেতেও পারছি না। এজন্য আমাদের ব্যবসায়ীরা ফুড প্রোডাক্টগুলো শুধুমাত্র এথনেক মার্কেটে সেল করেই খুশি।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, সম্পর্ক উন্নয়ন ও বাজার সম্প্রসারণে ইপিবি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়ীসহ সব পক্ষকেই উদ্যোগী হতে হবে।

অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘ভিয়েতনামের মতো অর্থনীতি যদি গত ১৫/২০ বছরে কয়েক ডজন এফটিএ বা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট সই করতে পারে আমরা একটাও পারি না কেন?এটা তো আমাদের দৈন্যতা। আমরা শুধু ইউরোপের মার্কেটে তাও কনসেশানের ট্যারিফ আছে বলে। আশিয়ানের সঙ্গে তো আমাদের সহযোগী মেম্বার হওয়ার দরকার ছিলো এতদিনে।’

বাজার সম্প্রসারণে রপ্তানিকারকদের সহযোগিতা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলায় ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণে কাজ করে যাচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, ‘সারা বিশ্বে প্রায় ৪৬টি আন্তর্জাতিক মেলাতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সহযোগিতায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা অংশগ্রহণ করবেন। এরমধ্যে এমন অনেক মেলা আছে যেগুলো অপ্রচলিত, আমাদের ভাষায় প্রখ্যাত গন্তব্য নয় সেসব গন্তব্যের মেলাতে আমরা অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি।

সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের পাশাপাশি ব্যাবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন করা গেলে রপ্তানির পালে সুবাতাস লাগবে বলেও জানান ইপিবির এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হাসান আরিফ বলেন, ‘শুধু পোশাক শিল্প না পাশাপাশি আরও সাতটি খাতের যারা উদ্যোক্তা আছেন তারা তাদের কাঁচামালটা কোনোরকম ডিউটি পরিশোধ না করে তারা আমদানি করতে পারবেন। আমরা আশা করছি এরকমভাবে রপ্তানিমুখী নীতিমালার সুবিধা যদি তাদের দিতে পারি তাহলে সে খাতগুলো হয়তো এগিয়ে আসবে এবং ভবিষ্যতে পোশাক শিল্পের পাশাপাশি দ্বিতীয় বা তৃতীয় খাতটিকেও আমরা খুঁজে পাবো।’

এদিকে, রপ্তানির বহুমুখীকরণে ‘এক জেলা এক পণ্য’ উদ্যোগটি পুনরায় চালু করতে যাচ্ছে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো।

ইএ