বন্দরে কনটেইনার জট কমানো, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও ব্যবসা সহজ করার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে প্রণীত কাস্টমস অ্যাক্ট সংশোধন করে শুল্ক আইন ২০২৩ প্রণয়ন করে সরকার। ২৬৯টি ধারা সংবলিত নতুন এই আইন গেল বছরের ৩১শে অক্টোবর জাতীয় সংসদে পাস হয়।
ব্যবসায়ী ও সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, নতুন আইনে শিল্পবান্ধব বেশকিছু বিধান থাকলেও এমন কিছু ধারা যুক্ত হয়েছে, যা শিল্পের ব্যয় ও পণ্যের দামই শুধু বাড়াবে না, বরং সিএন্ডএফ এজেন্টদের জীবিকাকে হুমকিতে ফেলবে।
আইনের ৮২ ধারায় বলা হয়েছে, পণ্যের ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রিতে দেয়া তথ্যে মিথ্যা বা ভুল হলে আমদানিকারক বা রপ্তানিকারকের পাশাপাশি তার পক্ষে বিল অব এন্ট্রি দাখিলকারী সিএন্ডএফ এজেন্টও দায়বদ্ধ থাকবে। এ জন্য তার লাইসেন্সও বাতিল হতে পারে।
সিএন্ডএফ এজেন্টরা বলছেন, প্রথমে ইমপোর্ট মেনিফেস্টো বা আইজিএম দাখিল করেন শিপিং এজেন্ট। তাদের আইজিএম ও আমদনিকারকের দেয়া ডকুমেন্টের ভিত্তিতে তারা শুল্কায়নের কাজ করেন। কিন্তু আমদানিকারক কনটেইনারে কী পণ্য অমদানি করেছেন সেটি তাদের জানা থাকে না। এক্ষেত্রে আমদানিকারকের ভুলের খেসারত তারা কেন দেবেন?
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, 'এই ধারা সংশোধনের বিষয়ে এনবিআরে একাধিক পত্র দেয়া হলেও কোনো কাজ হয়নি। এর ধারা সংশোধন না করে নতুন আইন কার্যকর করা হলে কাজ বন্ধ করে দিতে হবে।'
বন্দরে পণ্য ফেলে রাখলে এখন শুধু পোর্ট ও শিপিং ডেমারেজ দিতে হয়। নতুন আইনটি কার্যকর হলে কাস্টমসের জরিমানাও যুক্ত হবে। শুল্কায়ন বা পণ্যের শুল্ক কর ধার্যের ১০ দিনের মধ্যে শুল্ক-কর পরিশোধ করে বন্দর থেকে পণ্য খালাস না নিলে গুণতে হবে জরিমানা। এক্ষেত্রে পণ্যের শুল্ক-কর পরিশোধের সবশেষ তারিখ থেকে খালাসের সময় পর্যন্ত বার্ষিক ১০ শতাংশ হারে সাধারণ সুদ পরিশোধ করতে হবে।
আর শুল্ক-কর বকেয়া থাকলে বকেয়া অর্থের ওপরেই ১০ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। আবার বন্দরে পণ্য আসার পাঁচ দিনের মধ্যে পণ্যের ঘোষণা বা বিল অব এন্ট্রি জমা না দিলে আমদানিকারককে জরিমানা গুণতে হবে। এক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের দাম বেড়ে গেলে এর জের সাধারণ ভোক্তাদের ওপরই পড়বে।
নতুন কাস্টম আইনে আমদানিকারক শুল্ক কর পরিশোধ না করলে এর দায়ভার সিএন্ডএফ এজেন্টদের ওপর চাপানো হয়েছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করছেন তারা।