একসময় পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে দেখা যেতো অসংখ্য ছোটবড় কাঠের আসবাবপত্রের দোকান। সেই দোকানে দক্ষ কারিগরের হাতে তৈরি বাহারি নকশার কাঠের আসবাব শোভা বাড়াতো অন্দরমহলের। সেগুন, শালসহ মজবুত সব কাঠের ফার্নিচার নিজের পছন্দমতো বানিয়ে নিতেন ক্রেতারা।
এখনও শখের বশে অনেকেই বানিয়ে নেন কাঠের তৈরি ভারি ফার্নিচার। তবে দামি এসব আসবাবের বিক্রি কমায় কমেছে দোকানের সংখ্যা। যারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদেরও বেশিরভাগ সময়ই কাটছে অলসভাবে।
একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী বলেন, 'অনেক শোরুম হয়েছে এজন্য ব্যবসায় এখন মন্দা চলছে। এর মধ্যে কাঠের ফার্নিচার এখন সবার সামর্থ্যের মধ্যে পড়ে না। সেজন্য বিভিন্ন বিকল্প চিন্তাভাবনা করে।'
যতই দিন যাচ্ছে হাতে তৈরি কাঠের ফার্নিচারের জায়গা দখল করে নিচ্ছে নামিদামি ব্র্যান্ডের তুলনামূলক হালকা আসবাব। আগে হাতের তৈরি আসবাব বানাতে কারিগরদের সময় লেগে যেত কয়েকদিন। এখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে অল্প সময়েই তৈরি হচ্ছে খাট, সোফা, আলমারি, চেয়ার, টেবিলসহ বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র।
প্রযুক্তির ব্যবহারে নকশাও তৈরি করা হচ্ছে মেশিনে। শুধু নকশাই নয় কাঠ কাটা থেকে শুরু করে বিক্রয় উপযোগী করে ক্রেতার হাতে পৌঁছানো প্রায় সবই হচ্ছে হাতের স্পর্শ ছাড়া। এতে যেমন বাড়ছে আসবাবের মান, তেমনি বাড়ছে দক্ষ কর্মীর কর্মসংস্থান। দেশে তৈরি এসব মানসম্পন্ন আসবাব রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও।
হাতিলের সিইও সেলিম এইচ বলেন, 'অনেক কিছুই আমরা দেশিয়ভাবে যোগান দিতে পারছি। দেশের বাইরেও আমরা রপ্তানি করছি। গত বছরের রেকর্ড অনুযায়ী আমরা ১১০ মিলিয়ন ডলারের ফার্নিচার রপ্তানি করেছি। যেহেতু এটা একটা শ্রমঘন শিল্প, এখানে প্রচুর লোকবলের প্রয়োজন হয়।'
শুধু কাঠ নয় লোহা, রড, বেত ও প্লাস্টিকের ব্র্যান্ডের ফার্নিচারেরও রয়েছে বেশ কদর। ব্র্যান্ডের বেতের এক সেট ডাইনিং টেবিল কিনতে ক্রেতার গুনতে হয় ১৮ থেকে ২৮ হাজার টাকা। আর কাঠের ভালো মানের ডাইনিং টেবিল কিনতে গুণতে হবে ৫০ হাজার থেকে লাখ টাকা।
বাসাবাড়ির পাশাপাশি অফিসেও জায়গা করে নিচ্ছে পার্টিক্যাল বোর্ড ও মালয়েশিয়ান কাঠের তৈরি ব্র্যান্ডের হালকা ফার্নিচার।
তৈরি পোশাক, চামড়ার পরে আসবাব রপ্তানি হতে পারে বড় খাত। বর্তমানে দেশ থেকে রপ্তানি হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার ফার্নিচার। এ খাতের উন্নয়ন এবং রপ্তানি প্রসারে আসন্ন বাজেটে এই খাতের কর কমিয়ে নীতিমালা করার আহ্বান অর্থনীতিবিদদের।
অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবির বলেন, 'এই খাতে হাজার হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। এবং এই শ্রমিকগুলো দক্ষ শ্রমিক। অনেক শিক্ষিত কর্মশক্তিও এখানে নিয়োজিত আছে। তাদের বেশিরভাগই মর্ডান ফার্নিচারের সাথে যুক্ত আছে।'
ঘনবসতিপূর্ণ এই শহরে বাসাবাড়ি কিংবা অফিসে ক্রমেই কমে আসছে জায়গা। সেই কথা মাথায় রেখেই আসবাব এর আকার এবং নকশায় পরিবর্তন আনছেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। তবে এই খাত আরও এগিয়ে নিতে প্রয়োজন কাঁচামালের শুল্ক কমানো এবং সরকারের নীতি সহায়তা। এছাড়া দরকার পরিকল্পিত বনায়নও, তাহলে এই খাত আরও এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।