এক দশকের পুরনো প্ল্যাটফর্ম ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম অ্যাগ্রিমেন্ট বা টিকফা। যার উদ্দেশ্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যকে নতুন দিগন্তে পৌঁছে দেওয়া।
মূলত দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে নেওয়া ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় অনেক কিছুই করবার চেষ্টা করছে দুই দেশ। শুরু থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টিকফার আওতায় বাংলাদেশ গার্মেন্টস পণ্যের শুল্ক মুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে। বাংলাদেশ বলেছে, যে তুলা আমেরিকা থেকে আমদানি করা হয় তা থেকে উৎপাদিত পণ্যে শুল্কমুক্তভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বাজারজাত করার অধিকার দেওয়া উচিত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, 'শ্রমনীতির বিষয় নিয়ে আজ কোনো আলোচনা হয়নি। শুধু টিকফা প্ল্যাটফর্মের অধীনে বিভিন্ন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া, পোশাক খাতের বাইরে অন্যান্য পণ্য যেন রপ্তানি করতে পারি, ওষুধ কোম্পানিগুলো সহজে এফডি রেজিস্ট্রেশন পায় এ বিষয়গুলো আমরা জোর দিয়েছি।'
আজকের এই দ্বিপাক্ষিক সভায় ডব্লিউটিওতে যাতে বাংলাদেশকে যেন সমর্থন দেয় যুক্তরাষ্ট্র, সে অনুরোধও জানানো হয়েছে। অর্থায়ন দাবি করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ডিএফসি ফান্ড থেকে।
বাণিজ্য সচিব বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র বাদে সব উন্নয়ন ও উন্নত দেশে বাংলাদশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। তাই তাদেরকেও আমরা এটা দেওয়ার জন্য বলেছি। আমরা যুক্তি দেখিয়েছি, সকল স্বল্পোন্নত দেশের জনসংখ্যার ১৮ ভাগ বাংলাদেশে বাস করে। সেখানে এতো মানুষের জন্য তাদের এই সুবিধাটা দেওয়া উচিত।'
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
বাংলাদেশের শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের চাপ আবারও বাড়ছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ।
তিনি বলেন, 'তারা ১১ দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, যা তারা নতুন আইনে অন্তর্ভূক্ত করতে চায়। তবে আমরা বলেছি, এটা ড্রাফট করে রাখা হয়েছে। আমরা এটা শ্রম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো, তারা এটা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে দেখবে। শ্রম আইনে যেকোন সংস্কার তৃপক্ষীয় কমিটির মাধমে হয়ে থাকে। সেখানে মালিকপক্ষ, শ্রমিকপক্ষ ও সরকারের প্রতিনিধিরা থাকে। তখনই এটা সংশোধনে আসে।'
শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষার যুক্তরাষ্ট্র যে ১১ দফা পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সংগঠনের ন্যায্য প্রতিবাদ জানানোর অধিকার নিশ্চিত, কারখানা মালিক ও কর্তৃপক্ষকে সংযত হওয়ার পাশাপাশি হয়রানি বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া পাঁচটি বিষয়ে সরাসরি সংশোধনের কথা বলেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া শ্রমিকদের অন্যায্য প্রতিবাদের ক্ষেত্রে শীতিলতা দেখানোর পাশাপাশি অনলাইনে সংগঠনের তালিকা প্রকাশের কথা বলেছে দেশটি।
বৈঠকে কৃষি প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপারেও ইউএসটিআর প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছে বাংলাদেশ। মোটাদাগে কোনো প্রতিশ্রুতি না মিললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলোচনা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের জন্য ইতিবাচক বলছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।