ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের জেরে টালমাটাল বিশ্ব অর্থনীতি। বাইরে ছিল না ক্রিপ্টো খাতও। তবে তুমুল উত্থান-পতনের রোলারকোস্টার সময় পার করে এখন শুধু আকাশ ছোঁয়ার পালা।
প্রতিদিনের লেনদেন, দর ও বাজারমূল্যে বিশ্বের শীর্ষ ও সুপরিচিত ক্রিপ্টোমুদ্রা বিটকয়েনের প্রতিটির বিনিময়মূল্য সোমবার এক লাখ সাত হাজার ১৪৮ ডলারে পৌঁছেছে, যা ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামের নতুন রেকর্ড।
এর আগে রোববারও রেকর্ড সর্বোচ্চ এক লাখ ছয় হাজার ৮৫৫ ডলারে ওঠে বিটকয়েনের দাম, যা দু'দিন আগের তুলনায় সাড়ে পাঁচ শতাংশ বেশি। বিটকয়েন স্বর্ণযুগে প্রবেশ করছে- এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের গ্লোবাল হেড অব টেকনোলজি রিসার্চ ড্যানিয়েল ইভস বলেন, ‘বিটকয়েনের জন্য এটি নতুন স্বর্ণযুগ। আমি মনে করি, ট্রাম্পের আমলে যখন জুয়া খেলার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, নিয়ন্ত্রণহীন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেটা ভীষণ ইতিবাচক।’
সর্বনিম্ন হিসেবে এক ডলারেরও কম দাম থেকে দেড় দশকের মাথায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী বিটকয়েন; বর্তমানে যার বাজারমূল্য তিন দশমিক আট ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
এমন পরিস্থিতিতে গেলো বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ঘোষণা দেন দেশটির কৌশলগত তেলের মজুতের মতোই ডিজিটাল মুদ্রারও জাতীয় মজুত গড়ে তোলার। বিদায়ী বাইডেন প্রশাসনের তুলনায় নবনির্বাচিত ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টোবান্ধব ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করায় এর প্রভাব পড়ছে বাজারেও।
ড্যানিয়েল ইভস বলেন, ‘বিটকয়েন কোন দিকে যাচ্ছে দেখুন। দামের হিসেবে এটি এখন সবকিছুর ওপরে। মার্কিন ডলার, এমনকি স্বর্ণ ও অন্যান্য মূল্যবান পণ্যকেও ছাড়িয়ে গেছে এটি। তাই স্বল্প হারে হলেও মার্কিন মজুতের অংশ হিসেবে বিটকয়েন জায়গা করে নেবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।’
বছরের শুরুতে সর্বনিম্ন ৪০ হাজার ডলারের কম থেকে শুরু করে বছরের শেষে দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে ছাড়িয়েছে এক লাখের ঘর। চলতি বছর এখন পর্যন্ত বিটকয়েনের ঊর্ধ্বগতির হার ১৯২ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে ৫ নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পর ছয় সপ্তাহেই দাম বেড়েছে ৫০ শতাংশের বেশি। বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান পেস্ট্রো রিসার্চের আভাস, আসছে বছরে দুই লাখের ঘর ছাড়াতে পারে বিটকয়েনের দাম। তবে বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিও কম নয়।
ওয়েডবুশ সিকিউরিটিজের গ্লোবাল হেড বলেন, ‘বিটকয়েনের দাম উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়তে পারে। দেড় লাখ, দুই লাখ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তারপর আবারও বছরের শেষে ২০২৬ সাল নাগাদ নতুন গতি। কখনো না কখনো বাজার অস্থির হবেই।’
সাম্প্রতিক ঊর্ধ্বগতির কারণে প্রতিষ্ঠার পর এবারই প্রথম মূল ধারার মুদ্রা হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হচ্ছে বিটকয়েনের। ঊর্ধ্বমুখী ইথারসহ অন্যান্য ক্রিপ্টোমুদ্রাও। বিশেষ করে নতুন ২শ' ডলারের আশপাশে ঘুরতে থাকা সোলানার দাম চার অঙ্কের সংখ্যায় পৌঁছাতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।