দেশের মানুষের আর্থিক অবস্থা উন্নতির লক্ষ্যে গড়ে উঠেছিল সমবায় ব্যবস্থা। আর এর কার্যক্রম টেকসই ও মজবুত করতে প্রতিষ্ঠা করা হয় সমবায় ব্যাংক। দারিদ্র বিমোচন, উৎপাদনমুখী ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে এই ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতো। এখান থেকেই একসময় ঋণ নিয়ে চালাতো নানা কার্যক্রম।
বরিশালে ১৯১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সমবায় ব্যাংক। এই ব্যাংকটির নিজস্ব জমির পরিমাণ প্রায় ৩৬ শতাংশ। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্যদের কেউ এখন বেঁচে নেই। ২০০১ সাল থেকে সমবায় ব্যাংকের ঋণ দেয়াও বন্ধ। নেই কোনো কার্যক্রম। এতবড় একটি প্রতিষ্ঠানে হিসাবরক্ষক পদে একজন কর্মী ছাড়া আর কেউ নেই। অরক্ষিত এ সম্পদে অনেকেরই লোলুপদৃষ্টি। ব্যাংকের জমি ও ভবন দখলে নেয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে।
সমবায় ব্যাংকের হিসাবরক্ষক দেলোয়ার হোসেন বাবুল বলেন, ‘খুব বিপদের মধ্যে আছি। বিভিন্নভাবে আমাকে হেনস্তা করছে। তারা বলছে এইসব অবৈধ সম্পত্তি।’
নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা বগুড়া রোডে সমবায় ব্যাংকটির অবস্থান। এখানে ১১১ বছরের পুরাতন একটি দ্বিতল ভবন রয়েছে। কিন্তু এই সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণে নেই কোন কমিটি ও যোগ্য কর্মকর্তা। এই সুযোগে ইতোমধ্যে ব্যাংকের জমিতে স্থায়ী ভবন নির্মাণ করে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে একটি পক্ষ। সবকিছু অনিয়মে করা হয়েছে বলে দাবি উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার।
বরিশাল সদরের উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা লতিফা আক্তার বলেন, ‘সমবায় ব্যাংকের জমিতে যে ভবন করা হয়েছে তা সঠিক নিয়মে করা হয়নি। সব কিছুই অত্র কার্যালয়ের অগোচরে করা হয়েছে।’
একসময়ের কর্মমুখর ব্যাংকটির ভবনের ভেতরে রয়েছে বিভিন্ন আসবাবপত্র। অযত্ন অবহেলা হলেও সমবায়ীদের বিভিন্ন তথ্য এখনো সেখানে সংরক্ষিত। এই ব্যাংকের জমিতে ভবন নির্মাণ হয়নি নিয়ম মেনে। তদন্ত শেষে সে কথাই জানালেন বরিশালের জেলা সমবায় কর্মকর্তা।
বরিশালের সমবায় কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জী বলেন, ‘ভবন করার সময় জায়গা নিয়েছে তার চুক্তিপত্র নেই। অব্যবস্থাপনার ফাঁকে এইটা হয়েছে।’
বিভাগীয় সমবায় কর্মকর্তা জানান, জমিতে ভবন নির্মাণ হয়েছে সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর আমলে। তখন তিনি সমবায় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান এই কর্মকর্তা।
বরিশালের যুগ্ম নিবন্ধক বিভাগীয় সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘নির্বাচিত কমিটি আসলে আমরা আইনগতভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
বর্তমানে ভবনটি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছে একটি রেস্তোরাঁ। ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে পরবর্তী ৫ বছর চুক্তির মেয়াদ। ৩ হাজার ৩ বর্গফুটের ভাড়া ধরা হয়েছে মাত্র ৪০ হাজার টাকা। এছাড়া প্রায় সমান আরেকটি একতলা ভবনের ভাড়া ধরা হয়েছে মাত্র ১২ হাজার টাকা। ভাড়া নির্ধারণে বাজার দর না মানার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে সমবায়ীদের পক্ষ থেকে সমবায় মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা বরাবরে অভিযোগ করা হয়েছে।