ব্যাংকপাড়া
অর্থনীতি

শেষ সহায়ও খরচের খাতায় তুলছে মানুষ

যোগীন্দ্রনাথ সরকারের হারাধনের দশটি ছেলের কবিতাটি প্রায় সবারই জানা। একে একে সব পুত্র হারানোর পর একসময় 'রইলো বাকি এক'। সেই একটিও যখন থাকে না তখন হারাধনের অবস্থা যেন মানুষের যাপিত জীবনের অর্থনীতির সাথে মিলে যায়। মূল্যস্ফীতিতে কাটছাঁট দিতে দিতে এখন মানুষ সেই বিপদের জন্য তুলে রাখা হারাধনের শেষ নির্ভরতা বা সহায়ও যেন ধরে রাখার সক্ষমতা হারাচ্ছে। টিকে থাকার সংগ্রামে শেষ সম্বল সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ।

একসময় মানুষ নিজেদের যা কিছু পুঞ্জীভূত সম্পদ সেগুলো সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতেন। তবে এখন আর সেই দিন নেই। বদলেছে পরিস্থিতি। সঞ্চয়পত্র থেকে হাত ফিরিয়ে নিয়ে আসছে মানুষ।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত গত ১১ মাসে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ঋণাত্মক। বলা যেতে পারে ব্যয়ভার সামলাতে না পেরে সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে হয়েছে মানুষকে। ভিন্নভাবে বললে মূল্যস্ফীতির তুলনায় এখন সঞ্চয়পত্র অলাভজনক।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিক্রি কমেছে ১৭ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার ৩৮৬ শতাংশ কম। এর আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) ঋণাত্মক ছিল, টাকার অঙ্কে তা ৩ হাজার ২৮ কোটি টাকা। গত মে মাসেও ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা কম ছিল সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি। অর্থাৎ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে জীবনযাপনে খাপ খাওয়াতে এখন ঋণপত্র খুলতে আগ্রহী নন গ্রাহকরা। বরং ভেঙে ফেলছেন জরুরি সময়ের জন্য তুলে রাখা শেষ মুদ্রাটিও।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও গত অর্থবছরজুড়ে নানা সংকটে টিকে থাকার জন্য সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে বাধ্য হয়েছে সাধারণ মানুষ। আর যার প্রভাবে নিট বিক্রির পরিমাণ ঋণাত্মক হয়েছে।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭৩ শতাংশ। সার্বিক মূল্যস্ফীতি কোনো কোনো মাসে সিঙ্গেল ডিজিটে থাকলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতির ডাবল ডিজিট গত ১৩ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। এর বিপরীতে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগে সর্বোচ্চ মুনাফা পাওয়া যায় ১১.৭৬ শতাংশ। তবে মেয়াদপূর্তির আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙানো হলে মুনাফার হার নেমে আসে ৭.৭১ শতাংশে। যাদের ১৫ লাখের বেশি বিনিয়োগ তাদের মুনাফার হার আরো কমে যায়। সে তুলনায় বন্ডে বিনিয়োগে ২ বছর মেয়াদি বন্ডের সুদ ১২ শতাংশ। তবে ট্রেজারি বন্ডে মুনাফা থেকে ১০ শতাংশ কেটে নেয়া হয়। 

কোভিডের পর থেকেই ব্যয়ভারে বাজারের খরচ থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সব সেবাগ্রহণও সংক্ষিপ্ত করে নিতে বাধ্য হয়েছে মানুষ। অনেকটা বৃদ্ধ বয়সে নূহ্য নুহ্য মানুষের মতো হয়ে উঠেছে অর্থনীতি। শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধ বয়সের সঙ্গে হাত দিতে হয়েছে মানুষকে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র খোলা ও সেবা গ্রহণে নানা ভোগান্তি কমাতে একই দিনে বাংলাদেশ ব্যাংক দিয়েছে সুখবর। ব্যাংকগুলোকে বিনা খরচে সঞ্চয়পত্রের সেবা ও উৎসে কর কর্তনের সনদ প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইএ

এই সম্পর্কিত অন্যান্য খবর