ঈদের সালামি হওয়া চাই নতুন ও কড়কড়ে নোটে, শিশুদের চাওয়া এমনটাই। নতুন টাকা পেলে শুধু শিশু কেন, বড়দেরও চোখ-মুখে ফুটে উঠে আনন্দের ছাপ। তাই তো রোজা রেখে ভর দুপুরে নতুন টাকার খোঁজে অনেকেই ভিড় করেছেন গুলিস্তান-মতিঝিলের টাকার বাজারে।
টাকা করে হলে দাম বাড়ে না, কিন্তু কদর বাড়ে। নতুন বইয়ের মতো নতুন নোটের ঘ্রাণ নিতে পছন্দ করেন অনেকেই। ঈদ সালামিতে তাই নতুন টাকার চাহিদা বাড়ে। এ যেন অল্প টাকায় বেশি খুশি।
নতুন টাকা পাওয়ার মূল জায়গা ব্যাংক। দেশের ৩৩ ব্যাংকের ৮০টি শাখার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে নতুন টাকা। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যে কেউ নির্দিষ্ট শাখা থেকে শুধু একবারই নতুন টাকা নিতে পারবেন। একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ সাড়ে ১৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নতুন নোট নিতে পারবেন। এতে দিতে হবে না অতিরিক্ত অর্থ। প্রতিটি শাখায় কমপক্ষে ৯০ জনকে নতুন নোট দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংকে গিয়ে দেখা গেল নতুন টাকার খোঁজে দীর্ঘ লাইন। নির্দেশনায় ছিলো ৫, ১০, ২০, ৫০ ও ১০০ টাকার নতুন নোট মিলবে ব্যাংকে। তবে বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন। নির্দিষ্ট দুএকটি নোট ছাড়া বাকিগুলো না পাওয়ার অভিযোগ করেন কেউ কেউ। তবে যতটুকু পাওয়া গেছে তাতেই অনেকে বাড়ি ফিরেছেন খুশি মনে।
এক ক্রেতা বলেন, ‘নতুন টাকা নেয়ার জন্য আসছি। উনারা বলছে শুধু ২০০ টাকার নোট আছে, অন্যগুলো নেই।’
টাকার হাটে, ৫ টাকার বান্ডিল কিনতে লাগছে ৬৩০ টাকা। অতিরিক্ত দিতে হচ্ছে ১৩০ টাকা। তবে সবচেয়ে বেশি চাহিদা ১০ টাকার নতুন নোটের। সেক্ষেত্রে অতিরিক্ত লাগছে ২৫০ টাকা। আর ১০০ টাকার নোট পেতে দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ২০০ টাকা। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ঈদে নতুন টাকার দর বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবে ক্ষুব্ধ ক্রেতা। কিন্তু তারপরও নতুন টাকা নিয়েই যেতে হবে বাড়ি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, গত বছর নতুন টাকা ছাপানো হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। আর এবছর তা কমে ১১০ কোটি টাকা। যে কারণে এবার নতুন নোট কম পাওয়া যাচ্ছে ব্যাংকগুলোতে। আর খোলা বাজারেও বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন টাকা কম ছাপানোর কারণ, বাজারে তারল্য বেড়ে যেন মূল্যস্ফীতি না বাড়ে।
ড. মাহফুজ কবীর বলেন, 'নোট নোট বাজারে এসেছে। তবে সেটা পরিমাণে কম। এটা চলমাণ মৃদ্রানীতির বহিঃপ্রকাশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি কমানো।'
নতুন টাকা ঈদকে আনন্দময় করে। তাই পরিমাণ যাই হোক, ঈদ উদযাপনে নতুন টাকার আবেদন থাকে অম্লান।