অর্থনীতি
0

ফুলের রাজ্য গদখালিতে কমেছে ফুল বিক্রি, বাড়ছে প্লাস্টিক ফুলের চাহিদা

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ যখন ফুল রপ্তানির মাধ্যমে ভালো রাজস্ব আয় করছে সেখানে বাংলাদেশ হাঁটছে উল্টো পথে। অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে আমদানি করছেন প্লাস্টিকের ফুল। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় ফুলের বাজার। প্লাষ্টিকের ফুল আমদানি ও ব্যবহারের কারণে ফুলের সাম্রাজ্যখ্যাত যশোরের গদখালিতে কমেছে ফুল বিক্রি। লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষিদের। তাই খাতটির সম্প্রসারণে নীতিমালা চান সংশ্লিষ্টরা।

দেশের ২৫টি জেলার প্রায় ২০ হাজার কৃষক সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে সরাসরি বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করে বছরে প্রায় এক'শ কোটি টাকার ফুল বাজারজাত করে আসছে। সম্ভাবনাময় ফুল খাত যখন সম্প্রসারিত হচ্ছে ঠিক তখনি এক শ্রেনীর সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের ফুল আমদানি করে নষ্ট করছে দেশীয় ফুলের বাজার। ফলে তাজা ফুলের চাহিদা কমে যাচ্ছে, সাথে কমছে মূল্য।

ফুলচাষিদের মধ্য একজন জানান, প্লাস্টিকের ফুলের কারণে আমরা দাম পাচ্ছিনা। যার ফলে আমাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

ফুল আমদানির কারণে মার্কেটে আমাদের ফুলের দাম কমে গেছে বলেও জানান আরেক চাষি।

আরো একজন চাষি বলেন, 'আজ থেকে দুই বছর আগে একটা গোলাপ ২-৩ টাকা বেচতাম এখন ৫ পয়সা করে বিক্রি করতে হচ্ছে।'

ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালির পানিসারা গ্রামের গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা আর চন্দ্রমল্লিকার বাগানের ফুটন্ত ফুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। কেউ পরিষ্কার করছেন আগাছা, কেউ সংগ্রহ করছেন ফুল।

চাষিরা জানায়, বিদেশে রপ্তানি করতে পারলে আমাদের আয় আরও বেশি হত।

ফুল ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজন জানান, এই ফুলটা যদি আমরা বিদেশে রপ্তানি করতে পারতাম । তাহলে আমরা ও লাভবান হতাম এবং চাষিরাও লাভবান হতো।

বিক্রেতারা জানান, বাজারে আর্টিফেসিয়াল ফুলে ভরে গেছে। তাজা ফুলের মতো দেখতে রজনিগন্ধা, জারবেরা, গ্লাডিওলাসসহ এসব ফুল যশোর, ঢাকা ও চট্টগ্রামেরর বড় বড় ইভেন্টগুলোতে ব্যবহার হচ্ছে। এতে আমাদের বেচা-বিক্রি কম। বিয়েসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান এখন কৃত্রিম ফুল দিয়েই সাজানো হয়।

দেশে দিনদিন বাড়ছে ফুলের আবাদ। বর্তমানে যার চাষ হচ্ছে সাড়ে ৬ হাজার হেক্টর জমিতে। যদিও সেভাবে গড়ে উঠেনি বিপণন ব্যবস্থা। তাই খাতটির সম্প্রসারণে নীতিমালা চায় বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ারস সোসাইটির সাবেক সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, 'ফুল উৎপাদন , বাজারজাতকরণ বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা দীর্ঘদিন দাবি করে আসছি ফুলের উপর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা কিন্তু আজ পর্যন্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি।'

ফুলচাষিরা বলছেন, প্লাস্টিকের ফুলের আমদানি বন্ধ না হলে আগামীতে ফুলচাষ বন্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না। তাই এরই মধ্যে এ জাতীয় ফুল আমদানি বন্ধের দাবি তাদের।

প্লাস্টিকের ফুল পরিবেশসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অন্যদিকে দেশের ফুল স্টেক্টরকে রক্ষা করতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর প্লাস্টিকের ফুল আমদানি ও ব্যববহার বন্ধে দাবি এ পরিবেশবিদের।

গ্রীনওয়ার্ল্ড এনভাইরনমেন্ট ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শেখ আশিক মাহমুদ সবুজ বলেন, 'নানা অনুষ্ঠানে আমরা প্লাস্টিক এর ফুল ব্যবহার করছি। এক পর্যায়ে এই ফুলের কারণে মাটি তার উপজীব্যতা হারাবে। নদী, খাল-বিলের পানি দূষণ ঘটবে। পানিতে যে মাছ থাকে, জীব-বৈচিত্র্য থাকে সব ধংস হয়ে যাবে।'

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও ভালোই চাহিদা রয়েছে ফুলের। তবে প্রতিযোগিতার দৌড়ে এগিয়ে থাকতে হলে নজর দিতে হবে প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর। ফুলের জাতের ভেরিয়েশন আনতে পারলে ঘুরে দাঁড়াবে এ সেক্টর।

যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপ পরিচালক ড. সুশান্ত তরফদার বলেন, 'প্রাকৃতিক ফুল ব্যবহারে উৎসাহিতকরণ এবং প্লাস্টিক ফুল বর্জন করার জন্য মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছি।'

দেশের মোট চাহিদার ৭০ ভাগ ফুল সরবরাহ করেন গদখালি ফুলচাষীরা। এ অঞ্চলে প্রায় ৬ হাজার কৃষক বাণিজ্যিকভাবে ১২শ' হেক্টার জমিতে ১১ ধরনের ফুল চাষ করেন। এ থেকে প্রতি বছর পনের থেকে ১৬শ' কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা থাকে।

দেশে বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৩২ হাজার টনেরও বেশি ফুল। অভ্যান্তরিন বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা গেলে এটি হতে পারে বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত।


ইএ