দেশের মোট ওষুধের বাজার ৩১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা। চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ উৎপাদনকারী বাংলাদেশের এই খাতে প্রবৃদ্ধি অর্ধেকে নেমেছে গত এক বছরে।
বিশ্বব্যাপি ওষুধের বাজার পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান ইকভিয়া হেলকেয়ারের তথ্যমতে, ওষুধ খাতে গত ৫ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি ৭.৬ শতাংশ। তবে ২০২৩ সালের মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ২ শতাংশে নেমেছে। গত ১ বছরে গ্যাস্ট্রিক জাতীয় ওষুধের প্রবৃদ্ধি ৮.৮ থেকে ২.৭ শতাংশে নেমেছে, মাল্টি ভিটামিনের প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশ থেকে মাইনাস ২.৯ শতাংশে নেমেছে। এমনকি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রবৃদ্ধিও ৮.৮ থেকে নেমে ৬.৫ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ তথা জীবনরক্ষাকারী ওষুধের প্রবৃদ্ধি স্থির বা কোন কোন ক্ষেত্রে বেড়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের মধ্যে অতিপ্রয়োজনীয় ছাড়া অন্যান্য ওষুধ কেনার প্রবণতা কমেছে।
ওষুধ বাজার বিশেষজ্ঞ ড. আবু জাফর সাদেক বলেন, 'সাধারণ প্রবৃদ্ধির চেয়ে এই বছরের প্রবৃদ্ধি কিন্তু অর্ধেক। এটাই একটা চিন্তার জায়গা। এই বাজারের সিংহভাগ আসে খাদ্যাভাসের সাথে জড়িত ওষুধ থেকে। এটাও হতে পারে মানুষ সচেতন হয়ে যাওয়ায় এখন অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় ওষুধ খাচ্ছেন না।'
অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা কার্যক্রমের সুফল মিলছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। তবে প্রবৃদ্ধি কমলেও ওষুধের যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চিতে চিকিৎসকদের ব্যবস্থাপত্র কঠোরভাবে যাচাইয়ের দিকে জোর দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
মেডিসি বিশেষজ্ঞ ডা. ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, 'অনেক দেশই দেখা যায় যে, বিএমডিসির মতো যে বডি আছে তারা হঠাৎ করেই আউটডোরে বা ইনডোরে প্রেসক্রিপশন দেখে, সেখানে যে অপ্রয়োজনীয় যে ওষুধগুলো থাকে সেগুলোকে মার্কআপ করা হয়। যে ডাক্তার এগুলো দিচ্ছেন তার কাছে এর প্রয়োজনীয়তা জানতে চাওয়া হয়। তাদেরকে সতর্ক করা হয় যে এভাবে লিখতে পারবে না। আমাদের দেশে এমনও প্রেসক্রিপশন আছে যেখানে ২৫ থেকে ২৬টি ওষুধও লেখা থাকে।'
তবে দফায় দফায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির বিপরীতে মানুষের সামান্য আয় বৃদ্ধিকে প্রবৃদ্ধি কমার কারণ হিসেবে দেখছেন স্বাস্থ্য অর্থনীতিবিদরা।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, 'মানুষের আয় সীমিত আবার জিনিসপত্রের দাম বাড়াতে মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে। এবং এটা যদি নিয়মিত একটা অর্থনীতিতে হতে থাকে, তাহলে সেটি মানুষকে বাধ্য করে মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিসটা তারা সময়মতো কিনতে পারছে না। বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষরা, যাদের আয় বাড়ার সুযোগ নেই।'
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, গত ৪ বছরে মূল্যস্ফীতি দ্বিগুণ হলেও মানুষের আয় বেড়েছে এক শতাংশ। মানুষের আয় না বাড়লে, ওষুধের লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণে না আসলে জীবনরক্ষাকারী অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধ কেনা থেকেও মানুষ বঞ্চিত হবে, এমনটাই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।