সম্প্রতি আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা শুরু হলে ১৭ জুলাই দেশে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮ জুলাই মহাখালীতে অবস্থিত ডেটা সেন্টারে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে বিচ্ছিন্ন হয় ব্রডব্যান্ড সংযোগ। টানা ৫ দিন বন্ধ থাকার পর দেশে সীমিত পরিসরে চালু হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। তবে এখনও অকার্যকর মোবাইল ডাটা।
দীর্ঘ সময়ে ইন্টারনেট না থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের প্রায় সব খাত, যারমধ্যে রাইড সার্ভিস ও রেস্তোরাঁ ব্যবসা অন্যতম। কারণ এই দুই খাতে মোবাইল অ্যাপেই বেশি সেবা নেন ব্যবহারকারীরা।
রেস্তোরাঁয় কর্মরত ইয়াসিন আরাফাত নামের একজন কিছুক্ষণ পর পর ট্যাবে যাচাই করছেন, অনলাইনে কোনো অর্ডার আসলো কি-না! তবে ঘণ্টার পর ঘণ্টার কেটে গেলেও কোনো সাড়া পেলেন না তিনি। ইন্টারনেট সমস্যার বিরূপ প্রভাবে এমন সংকট বেশিরভাগ রেস্তোরাঁয়।
তিনি বলেন, 'এখন আমাদের অফলাইন-অনলাইন দুটোতেই সমস্যা হচ্ছে। কোনো অর্ডার পাচ্ছি না। কাস্টমার নেই বললেই চলে। আগে খুব ভালো বিক্রি হতো কিন্তু এখন সেটা নেই।'
মোবাইল সিমের ইন্টারনেটের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে খাবার পৌঁছে দেয়া ডেলিভারি ম্যানরাও পড়েছেন বিপাকে। ক্রেতা ও রেস্তোরাঁগুলোর সাথে যুক্ত হতে ওয়াইফাই সংযোগের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা।
রেস্তোরাঁয় মানুষের উপস্থিতি কম আর ইন্টারনেট সমস্যায় অনলাইন ব্যবসায় ধীরগতি, দুইয়ে মিলে দিন যত যাচ্ছে ততই ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে বলে জানান ক্যাফে এপেলিয়ানোর মালিক প্রদীপ ঘোষ।
তিনি বলেন, '১৫ দিন ব্যবসার জন্য অনেক বড় একটা সময়। এটা দ্রুত সময়ে ঠিক হয়ে গেলে আমরা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবো। কিন্তু এর বেশি লোকসান আমাদের পক্ষে নেয়া সম্ভব না।'
এদিকে শতভাগ মোবাইল অ্যাপে যোগাযোগ স্থাপন করে যাতায়াত করা রাইড সার্ভিস ব্যবহারকারীরাও পড়েছেন ইন্টারনেট সমস্যায়। এই সার্ভিসের অচল অবস্থায় বাড়ছে আর্থিক ক্ষতি।
স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রাইড সার্ভিস নেয়া মানুষের সংখ্যা কমেছে বলে জানান চালক ও যাত্রীরা। অ্যাপ বন্ধ থাকায় দিতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।
অনলাইন মাধ্যমে রাইড সার্ভিস দেয়া চালকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন অ্যাপ-বেইজড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের তথ্যমতে, সারাদেশে ইন্টারনেটনির্ভর রাইড সার্ভিস দেন প্রায় ৪ লাখ বাইকার। আর প্রাইভেটকারে সার্ভিস দেয়া হয় ১৫ হাজার চালক।
চলমান পরিস্থিতিতে ইন্টারনেট সেবা না থাকায় এই খাতে প্রায় কয়েকশো কোটি টাকা ক্ষতির দাবি করেন অ্যাপ-বেইজড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কারস ইউনিয়নের সভাপতি বেলাল আহমেদ।
তিনি বলেন, 'রাইড কিংবা ফুড পার্সেলে যারা আছেন তারা যদি প্রতিদিন ১ হাজার করেও আয় করেন, তাহলে আমাদের হিসেবে সেটা ৬০২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। দিনমজুর এ মানুষগুলো যখন টানা ১৫ দিন বেকার বসে থাকে। তখন এর প্রভাব সংসারে গিয়ে পড়ে।'
চলমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় আছে রেস্তোরাঁ ও রাইড সার্ভিস নির্ভর ব্যক্তিরা। এসব খাত সচল রাখতে পুরোদমে ইন্টারনেট সেবা চালুর পাশাপাশি সহায়তার দাবি সংশ্লিষ্টদের।