সিঁড়ির চালা গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আফাজ কাঁইয়া। ছিলেন গাজীপুরের কমান্ডার। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য।
আফাজ কাঁইয়া বলেন, 'ভাতের অধিকার পূরণ হয়েছে। আমরা এখন অনেক ডেভেলপ হয়েছি। সমালোচনা থাকবেই।'
যে স্বপ্নের আশায় দেশ স্বাধীনে জীবনবাজি রেখেছিলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছরে পৌঁছে তা কি পেয়েছেন?
কিছুটা আক্ষেপ জানালেও পরিবর্তন মিলেছে চোখে পড়ার মতো। দেশ স্বাধীনের পাশাপাশি ৭৭ বছর বয়সী এ মুক্তিযোদ্ধা গ্রামের উন্নয়নেও করে যাচ্ছেন কাজ। রক্ত দিয়ে কেনা এ দেশে যেনো আজীবন মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারেন, এটিই তার ইচ্ছে।
আফাজ কাঁইয়া বলেন, 'আমরা ঘুমের থেকে উঠে দেখতাম পাড়া থেকে ৮ থেকে ১০টা করে পাতিল এনে রেখে যেতো রান্না করে। ভাত, জাউ এগুলো রেখে দিতাম মানুষ নিয়ে খেতো। এখন তো তারা আমাদের থেকে উন্নত। সোনার বাংলাকে সোনার বাংলায় করা উচিত, সোনার মানুষ হওয়া উচিত।'
আফাজ কাইয়ার এ কথোপকথনে ফুটে ওঠে যেন দেশের বাস্তবচিত্র। স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ের অর্থনীতির সূচকের দিকে নজর দিলে দেখা যায়, ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ছিল মাত্র ২৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। জিডিপির আকার ছিল ৭ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা। মাথাপিছু আয় মাত্র ১২৯ ডলার। দারিদ্রের হার ছিল ৭০ শতাংশ।

১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের চিত্র। ছবি: এখন টিভি
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দেখা যাচ্ছে রপ্তানি আয় বহুগুণে বেড়ে মিলিয়ন ডলার থেকে এসেছে বিলিয়ন ডলারের ঘরে। ২০২৩ সালের হিসাবে যা ৫৫ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। জিডিপি আকার ১৯৭৩-১৯৭৪ অর্থবছরের তুলনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৪ লাখ ৩৯ হাজার ২৭৩ কোটি টাকায়। মাথাপিছু আয় ২৭৬৫ ডলার। দারিদ্রের হার কমে হয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের চিত্র। ছবি: এখন টিভি
প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, '৭১ সালে ছিল সাড়ে সাত কোটি মানুষ এখন প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। এখন মানুষ দু'বেলা খেতে পারছে। তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো হয়েছে। গ্রামগুলো আর গ্রাম নেই, বেশির ভাগ জায়গায় দেখতে পাওয়া যায় না কুঁড়েঘর সব জায়গায় দালান হয়ে গেছে। অর্থাৎ জনজীবনে একটা ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।'
কৃষিনির্ভরতা থেকে শিল্পনির্ভর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ, রপ্তানি আয়ের ৮৩ শতাংশ আয় করে এ খাত থেকে। যা নিয়ে ধারণা করা হচ্ছে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর ২৫তম বড় অর্থনীতির দেশ। শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি এমনটা নয়। মানব উন্নয়নের সব সূচকে বেড়েছে বাংলাদেশের স্কোর। খাদ্য উৎপাদন, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রের পরিবর্তন বিশ্বে অনুকরণীয়। স্বাধীনতাকালীন সময়ের সঙ্গে বর্তমান সময়ের হিসাবে শিশু মৃত্যুহার কমেছে হাজারে ১৫২ থেকে ২২ জনে, মাতৃমৃত্যু হার ৪ দশমিক ৭৮ থেকে ১ দশমিক ৬৯। শিক্ষার হার বেড়ে হয়েছে ৭৫ দশমিক ২ শতাংশ।
এ পরিবর্তন যতটুকু হয়েছে তাতে কি অর্থনীতিবিদরা খুশি? এমন প্রশ্ন রাখা হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ‘রাতারাতি না হলেও পরিবর্তন যা হচ্ছে তা ইতিবাচক।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, 'আমি তো বলব যে ৭২ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতির যে অগ্রগতি সেটা বিস্ময়কর। অর্থনীতির একটা বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে গত ৫০ বছরে। মূলত কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি সেটি এখন শিল্পভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে ম্যাক্রো ইকোনমিক আরও শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল করতে হবে। আমাদের সুদের হার, বিনিময় হার, রিজার্ভের ক্ষয় এসব বিষয় নিয়ে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তবুও আমি আশাবাদী।
মানবসম্পদ সূচকে অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সক্ষমতাও এমনভাবে বেড়েছে যেখানে বিদেশি ঋণ সহায়তানির্ভর উন্নয়নে অভ্যস্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ করছে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বে জানান দিচ্ছে বাংলাদেশ আর নেই তলাবিহীন ঝুড়ি।