ব্যস্ততা বাড়ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের, দেশের প্রধান এই বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১৬০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে ৩২টি বিদেশি এয়ারলাইন্স। এর মধ্যে আছে এমিরেটস, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, কাতার এয়ারওয়েজ, টার্কিশ এয়ারলাইন্সের মতো বিশ্বসেরা বিমান সংস্থা। তৃতীয় টার্মিনাল ঘিরে আরও কমপক্ষে ১০টি এয়ারলাইন্স অপেক্ষায় আছে।
এয়ারলাইন্সের সংখ্যা বাড়ায় প্রতিযোগিতা বাড়লেও কমেনি টিকিটের দাম। উল্টো বিদেশি রুটগুলোতে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ভাড়া বেড়েছে। উড়তে থাকা দেশের অ্যাভিয়েশন খাতে হঠাৎ কেন এই ধাক্কা?
অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) বলছে, ডলার সংকটে টিকিট বিক্রির মুনাফা নিজ দেশে নিতে না পারায় বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর কাছে টিকিট বিক্রি বন্ধ করেছে বেশ কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইন্স। তাতেই টিকিটের দাম বেড়েছে।
কিছু কিছু এয়ারলাইন্স আবার বাংলাদেশে শুধু বিজনেস ক্লাসের টিকিট বিক্রি চালু রেখেছে। তাই কম ভাড়ার টিকিট পেতে অনেকেই পাশ্ববর্তী দেশের এপিআই ব্যবহার করে টিকিট কাটছে। এতে হুমকিতে পড়েছে সাড়ে তিন হাজার ট্রাভেল এজেন্সির প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার টিকিট ব্যবসা। মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
আটাব-এর মহাসচিব আব্দুস সালাম আরেফ বলেন, ‘যে টিকিট বিক্রি হয়, এর ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বাইরের এজেন্সিগুলো থেকে হচ্ছে। এই ২০ শতাংশ টিকিট বিক্রি থেকে দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বঞ্চিত হচ্ছে।’
এয়ারলাইন্সগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আয়াটা) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর ২১৪ মিলিয়ন ডলার আটকা বাংলাদেশে, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ২০২২ সে যে সংখ্যা ছিল ২০৮ মিলিয়ন বা প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রায় ৩০০ এয়ারলাইন্সের এই সংস্থা ইতোমধ্যে টিকিট বিক্রি থেকে আয়ের অর্থ দিতে না পারায় গত বছর বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্বিতীয় 'সর্বোচ্চ খারাপ' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে চলা এই সমস্যায় দেশের ইমেজ সংকটের পাশাপাশি সেবা দেয়া এয়ারলাইন্সগুলো নিরুৎসাহিত হবে।
বাংলাদেশ মনিটরের সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, ‘এয়ারলাইন্সগুলো তো এদেশে ব্যবসা করতে এসেছে। আর ব্যবসা করে যদি তারা মুনাফা সময়মতো না পাঠাতে পারে, স্বাভাবিকভাবে নিরুৎসাহিত হবে।’
বৈশ্বিক সংকটকে দায়ী করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (বেবিচক) এয়ার ভাইস মার্শাল এম. মফিদুর রহমান বলেন, ‘পুরোপুরি টাকা দিতে না পারলেও ধাপে ধাপে পাওনা শোধ করা হচ্ছে।’
ইতোমধ্যে গেল বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে ইতিহাদ এয়ারওয়েজ। চলতি বছরের শুরুতে বন্ধ করেছে ওমান এয়ার আর ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে কুয়েত এয়ারওয়েজ।