সবকিছু ছাপিয়ে এরাই দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সের প্রবাহে গতির চিত্র ধরে রেখেছে। ১৯৯১ সালে মাত্র ২১৮৯ জন নারী কর্মী গমনের মাধ্যমে অভিবাসনে নারী কর্মীর অংশগ্রহন শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিবছরে তা প্রায় ৪০-৫০ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
গৃহকর্মী পেশা ছাড়াও গার্মেন্টস ট্রেডে প্রশিক্ষিত নারীরা জর্ডান, মরিশাস, ওমানসহ বিভিন্ন দেশে গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে গমনের সুযোগ পাচ্ছেন, পাশাপাশি চীন জাপানে নার্সিং পেশায় যাচ্ছেন। এছাড়া কাতার, কুয়েত, লিবিয়া, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে নারীরা বেশি যাচ্ছেন। যার ধারাবাহিকতায় গেলো ২০২৩ সালে ১ লাখ ৫ হাজার ২৪২ জন নারী কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।
এদিকে বিদেশ গমনে চলতি বছরের শুরুতে ভিসা পাওয়া নারীরা বলছেন দক্ষতার পাশাপাশি ভাষা জ্ঞান থাকায় এবার বেশ কিছু নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠান উচ্চ মজুরি নিশ্চিত করেছে।
নারীরা বলেন, 'প্রশিক্ষণ নিয়েছি, এখন সার্টিফিকেট দিবে। পরে এটা আবার জমা দিতে হবে। যেহেতু চায়না পরিচ্ছন্ন কোম্পানি তাই আশা করা যায় ভালো হবে। সুপারভাইজার হিসেবে গেলে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কারণ ওই দেশের টাকার মানটা ভালো। গার্মেন্টসে যাচ্ছি, বেতন বাংলাদেশি টাকায় ৭০ হাজার আসবে।'
গমন ইচ্ছুকদের মধ্যে ভাষা, শৃঙ্খলা, আত্মবিশ্বাসের সমন্বয় ঘটাতে হবে বলে মনে করেন জনশক্তি রপ্তানিকারক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। বলেন, 'নার্স থেকে শুরু করে নারীদের কিন্তু অনেক চাহিদা রয়েছে। আমরা দূতাবাসকে যদি কাজে লাগাই, তারাও (দূতাবাস) যদি আমাদেরকে কাজের সুযোগ দেয় তাহলে আমি মনে করি অদূর ভবিষ্যতে ভালো একটা অবস্থানে যেতে পারবো। নারী কর্মীদের কোন খরচ নেই তাই পুরো রেমিট্যান্সটা কিন্তু চলে আসতেছে।'
রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে এবং তা দ্রুতই বাস্তবায়ন হবে বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী। বলেন, 'এখন নারীরা এগিয়ে আসছে। তারা যাতে আরও উৎসাহিত হয়, কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয় সে ব্যাপারে আমরা সঠিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদেরকে বিদেশে প্রেরণ করার ব্যবস্থা করবো।'
অভিবাসনের আগে চুক্তিপত্রে উল্লেখ্য সুযোগ-সুবিধা, চাকরির মেয়াদ, বেতনের বিষয়ে ভালোভাবে জেনেবুঝে গন্তব্য, দেশের ভাষা, আইন-কানুন, সামাজিক রীতি-নীতি জেনে বিদেশ গমন করে সেক্ষেত্রে শ্রমিকের মানের পাশাপাশি আরও বাড়বে রেমিট্যান্স বা বৈদেশিক আয়ের সূচক।
তবে নারী শ্রমিক পাঠানোর পর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও ভাষা না জানা এবং নিজেদের অসচেতনতার কারণে বছরে একটি অংশ সর্বস্ব হারিয়ে বিদেশ থেকে ফেরেন। এর মধ্যে কিছু নারী শ্রমিক দেশে এসে মুখ খুললেও বাকিরা সবকিছুর আড়ালে থেকে যান।