সিংগাইর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে এগিয়ে যাচ্ছে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলা। সাভারের বিরুলিয়া কিংবা যশোরের গদখালির মতোই এখানে বড় পরিসরে চাষ হচ্ছে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও স্টারের মতো জনপ্রিয় ফুল।
বর্তমানে উপজেলার জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নের আট থেকে দশটি গ্রামে প্রায় ২০ হেক্টর জমিতে নানা জাতের ফুলের আবাদ হয়েছে। যার মধ্যে ১৬ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে নানা জাতের গোলাপ ফুল। আর বাকি ৪ হেক্টর জমিতে গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, জিপসি ও স্টারসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল রয়েছে।

সরেজমিন, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ফুল খেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন উপজেলার ফুল চাষিরা। কেউ কেউ ফুল সংগ্রহ করে তা দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানোর জন্য বাজারজাতকরণ কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।
ধল্লা ইউনিয়নের ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন সিংগাইরের অন্যতম সফল ফুলচাষি। ১৮ বছর আগে মাত্র ২ বিঘা জমিতে ফুলচাষ শুরু করেছিলেন তিনি। বর্তমানে তার ফুলের ক্ষেতের পরিমাণ ২৫ বিঘায় পৌঁছেছে।
বাবুল বলেন, ‘এই মৌসুমে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। তাই আমরা আরও বেশি শ্রম দিয়ে ফুলের যত্ন নিচ্ছি। এবার ফলন ভালো হয়েছে, বাজারও ভালো। আশা করছি, লাভবান হতে পারব।’
শুধু বাবুল নন, তার মতো আরও ২০-২৫ জন কৃষক এখন বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করছেন। উপজেলার জয়মন্টপ, ধল্লা, শায়েস্তা ও তালেবপুর ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ফুল চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

জয়মন্টপের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি সাত বছর ধরে তিন বিঘা জায়গায় চায়না গোলাপ ফুল চাষ করছি। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় ফুলের মানও ভালো হয়েছে। এখন প্রতি পিস গোলাপ বিক্রি করছি ৩০ টাকা। আর ক্যাপ পড়ানো গোলাপ বিক্রি করছি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।’
ফোর্ডনগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের তরুণ চাষি সবুজুর রহমান জানান, ‘আমি ৫২ শতাংশ জায়গায় সাদা ও হলুদ জাতের চন্দ্রমল্লিকা ফুলের আবাদ করেছি। এসব গাছের বীজ ভারত থেকে আনতে হয়। সব মিলিয়ে আমার প্রায় আড়াই লাখ টাকার মত খরচ হয়েছে। বাজার যদি ঠিক থাকে তাহলে খরচ বাদ দিয়ে দেড় লাখ টাকা লাভ হবে।’
একই গ্রামের ফুল চাষি তুহিন জানান, ‘দেড় বিঘা জায়গায় জিপসি ফুলের আবাদ করেছি। ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমার প্রায় এই খেত থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ হবে। আমাদের ফুল ঢাকার বিভিন্ন মার্কেটে বিক্রি হয়।’

তবে চাষিদের একটি উদ্বেগ রয়েছে, বিদেশ থেকে আমদানি করা ফুলের কারণে স্থানীয় বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। জয়মন্টপের কানাইনগর গ্রামের আনোয়ার জানান, ‘ফেব্রুয়ারি মাসের এই তিনটি দিবসে সবচেয়ে বেশি ফুল কেনাবেচা হয়। সরকারের কাছে আমাদের দাবি ভারত ও চায়না থেকে যেন কোন ফুল আমদানি করা না হয়। যদি আমদানি না হয় তাহলে আমরা লাভবান হবো।’
এ বিষয়ে সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ফুল চাষ এখানে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজধানীর নিকটবর্তী হওয়ায় পরিবহন খরচ কম এবং বাজারজাতকরণ সহজ হওয়ায় চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসেই আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রির আশা করা হচ্ছে।’