একই উৎসবের আছে নানা নাম। মারমা সম্প্রদায়ের কাছে যা সাংগ্রাই, বিজু নাম চাকমাদের কাছে , আর ত্রিপুরারা বৈসুক নামে উদযাপন করে। অন্যান্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীও নিজেদের ভিন্ন ভিন্ন নামে বরণ করে নেয় বছরের এই সূচনা লগ্নকে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় এই উৎসবে প্রকৃতির সাথে এবার বান্দরবানের পাহাড়ি জনগোষ্ঠীও মেতেছে নতুনের আহ্বানে। বিভিন্ন গ্রাম পাড়ায় লেগেছে পুরনোকে বিদায় আর নতুনকে বরণের ধুম। পূর্ব পুরুষের লোকাচার, সংস্কৃতি আর সুরে মারমাদের মহা আয়োজন দেখা গেল শহরের রাজার মাঠে।
১৩ এপ্রিল থেকে মূল আনুষ্ঠানিকতা হলেও আগেভাগেই এখানে নামে উৎসবের আমেজ। এ উপলক্ষে থাকে ৪ থেকে ৫ দিনের আয়োজন। এসময় বৈচিত্র্যময় সাজ আর অলংকারে নিজেদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন মারমা তরুণ তরুণীরা। চলে নাচ গান যন্ত্র খেলাধুলা আর শারীরিক কসরতের চোখ ধাঁধানো পরিবেশনা। উৎসব দেখতে দুর্গম পাহাড় থেকে ছুটে আসেন ছেলে বুড়োসহ নানা বয়সী মানুষ। মেলা ঘিরে তৈরি হয় পাহাড়ের আদি সাংস্কৃতিক আমেজ।
সাংগ্রাই উৎসবে নিজস্ব সংস্কৃতির গান পরিবেশন করছেন মারমা তরুণ-তরুণীরা। ছবি: এখন টিভি
মারমা সম্প্রদায়ের একজন বলেন, নতুন বছরে আমাদের সকলের আশা আকাঙ্ক্ষা যেন পূর্ণ হয়। সেজন্য আমরা এ জলকেলি উৎসব পালন করে থাকি। এখানে পূজা ও প্রার্থনা করা হয়।
বান্দরবান মারমা শিল্পী গোষ্ঠীর সভাপতি চ থ্রাই প্রু বলেন, 'পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে সাংগ্রাই উৎসব করা হয়। ঐতিহ্যবাহী সাংগ্রাই নাচ আর গান নিয়ে এ আয়োজন আমরা সাজিয়ছি।'
মারমা তরুণীদের প্রথম পছন্দ থামি। পুরুষদের শরীরে শোভা ছড়িয়েছে নানা রঙের লুঙ্গি। এসব পরেই তারা মেতেছিলেন উৎসবের মূল আকর্ষণ জলখেলায়।
মারমা তরুণ তরুণীরা বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে ছেলে মেয়েরা উৎসব উপভোগ করতে আসে। সকলেই মিলেমিশে একটি অসাম্প্রদায়িক বান্দরবান গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। উৎসবকে কেন্দ্র করে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করে থাকি।
এই উৎসব পাহাড়ের অর্থনীতিতে দেয় নতুন উচ্চতা। এসময় নানা রকম সবজি ও ফলের কদর বাড়ে। স্থানীয় মারমা বাজার মুখর হয় ক্রেতার ভীড়ে। উৎসবকে ঘিরে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পণ্য, অলংকার, বাঁশ, বেতের তৈরি উপকরণ, মাটির অলংকার, ঐতিহ্যবাহী পোশাক নিয়ে হাজির হন উদ্যোক্তারা।