পুরান ঢাকার কলতাবাজারের হাসমত মিয়ার কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্যস্ততার অন্ত নেই। রোববার (১৪ জানুয়ারি) সাকরাইন। তার সুনিপুণ হাতে তৈরি ঘুড়ি আকাশে উড়বে। অন্যকে আনন্দ দেয়ার উপকরণ তৈরির কাজটি অর্ধশত বছর ধরে করছেন তিনি। বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে গিয়ে লাভ-লোকসানের হিসেব কষার সুযোগ না পেলেও দিনে দিনে এটিই হয়ে গেছে পারিবারিক পেশা। তাই সাকরাইনই তাদের মূল উপলক্ষ।
এখন টেলিভিশনকে হাসমত মিয়া বলেন, 'সাকরাইনের সময় আমি পাইকারি সাপ্লাই বন্ধ করে দেই। কারণ এলাকার অনেক পোলাপান এবং দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন আসে। তাদেরকে মাল দিতে হয় তাই চাপটা বেশি পড়ে।'
পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী পৌষ সংক্রান্তির এই উৎসবের মূল আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো। তাই প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে অনেকেই শেষ সময়ে এসে ভিড় করছেন শাঁখারীবাজারের দোকানগুলোতে।
বছরের অন্য সময়ের চেয়ে এ মৌসুমের ঘুড়ি-সুতা ও অন্য উপকরণে থাকে রং, নকশা, মানভেদে ভিন্নতা। আছে নামের বাহারও। চক্ষুদার, পঙ্খিরাজ, লাভদারসহ হরেক নামের ঘুড়ি বাজারে এসেছে। ৬ টাকা থেকে ৫শ' টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এসব ঘুড়ি।
ক্রেতারা বলেন, 'এইদিনটা খুব উপভোগ করি তাই ৭০ টার মত ঘুড়ি কিনলাম। সাকরাইন উড়াবো তাই সুতা ও নাটাই কিনেছি।'
শুধু শাঁখারীবাজার নয়, তাঁতীবাজার ও চকবাজারের দোকানগুলোতেও ঘুড়ি-নাটাই-সুতা বিক্রির ধুম পড়েছে। কাঠের বা লোহার নাটাই বিক্রি হচ্ছে আড়াইশ' থেকে হাজার টাকা দরে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সাকরাইনে এই তিন-চারটা দিনেই আমাদের ব্যবসাটা হয়। প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ হাজার ঘুড়ি এবং ৪০০-৫০০ পিস সুতা বিক্রি হয়। সাথে নাটাই বিক্রি হচ্ছে। ১০-১২ টাকা দামের ঘুড়িগুলো বেশি চলে।
সাকরাইন উপলক্ষে বাজারে এসেছে রঙ-বেরঙের ঘুড়ি
এদিকে রোববার সাকরাইন উৎসব হলেও কয়েকদিন আগে থেকেই পুরান ঢাকার আকাশে উড়তে শুরু করেছে নানান রঙের ঘুড়ি। যেখানে ঘুড়ি উড়িয়ে কাটাকাটির পালায় মেতেছেন অনেকেই। সেইসঙ্গে দুদিন আগে থেকেই উদযাপনের প্রস্তুতি শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাড়ির ছাদে ছাদে তৈরি করছেন প্যান্ডেল। পৌষ সংক্রান্তিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরাও। বয়সীদের কাছে ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা আর নবীনদের কাছে জমজমাট উৎসব পর্ব।
তরুণ-তরুণীরা বলেন, 'অন্তত একমাস আগে থেকেই কিভাবে সাকরাইন পালন করবো সেটা নিয়ে একটা পরিকল্পনা থাকে। বন্ধুরা মিলে খুব মজা করি। আতশবাজি ফোটাই এবং নাচগান হয়। যতদিন বেঁচে থাকবো সাকরাইন পালন করবো। এটা আমাদের একটা ঐতিহ্য।'
সাকরাইন উদযাপনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। আতশবাজিসহ জনদুর্ভোগ হয় এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকার আহবানও জানায় ডিএমপি।
ডিএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন বলেন, সাকরাইন পালন করার জায়গাগুলোতে নিরাপত্তার জন্য আমাদের পুলিশের ফোর্স নিয়োজিত থাকবে। সেই সাথে আতশবাজি ফোটানো বন্ধ করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।'
বাংলা ও ইংরেজি ক্যালেন্ডারের পার্থক্য থাকায় দুদিন ধরে পালিত হয় সাকরাইন উৎসব।