আজ (বুধবার, ৯ অক্টোবর) ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের আদালত আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
২০১৯ সালের ২০ জুলাই, রাজধানীর বাড্ডায় ছেলে ধরা সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হন তাসলিমা বেগম রেণু। গণপিটুনিতে তার থেঁতলে যাওয়া মুখে কেবলই ছিল বাঁচতে চাওয়ার আকুতি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি দুই সন্তানের মা রেণুর। তার রক্তে ভেজা শরীরে নিথর হয়ে যায় নিমিষেই। গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গণপিটুনিতে নিহত রেণু হত্যার আলোচিত এ ঘটনায় ওইদিন বাড্ডা থানায় ৪০০ থেকে ৫০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন রেণুর ভাগ্নে নাসির উদ্দিন। পরে গ্রেপ্তার করা হয় বেশ কয়েকজনকে।
এরপর ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে ১৫ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। ২০২১ সালে আদালতে ১৩ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ মামলায় ৩৬ সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
এরপর দীর্ঘ তদন্ত, সাক্ষী প্রমাণ শেষে ৫ বছর ২ মাস ২০ দিন পর রায় হলো আলোচিত সে মামলার। রায়ের প্রধান আসামি ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ মোরশেদ আলমের আদালত। একইসঙ্গে রিয়া বেগম, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, ও আসাদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। মামলায় বাকি আট আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
আসামিদের মধ্যে ইব্রাহিম ওরফে হৃদয় মোল্লার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে রিয়া বেগম ময়না, আবুল কালাম আজাদ, কামাল হোসেন, আসাদুলকে। তবে এই রায়ে অসন্তুষ্টি জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানান বাদী পক্ষের আইনজীবী।
বাদী পক্ষের আইনজীবী মো জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত বারবার কয়েকটি শব্দ উচ্চারণ করেছেন যে পৈশাচিক, নারকীয় হত্যাকাণ্ডের যে রায়, এই মামলায় ১৫ জন আসামি ছিল। এর মধ্যে দুই জনকে শিশু আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। যা বর্তমানে বিচারাধীন আছে। বাকি ১৩ জনের মধ্যে কজন আগে থেকেই পলাতক ছিল। এবং যে ১২ জনের রায় ঘোষণা হয়েছে এর মধ্যে আদালত সাত জনকে খালাস দিয়েছেন।’
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন তারা।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘যাবজ্জীবন সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে যে বিবেচনাগুলো আদালত নিয়ে থাকেন আমি মনে করি আমার আসামির পক্ষে সে বিবেচনাগুলো নেয়া হয়নি।’
তাসলিমা বেগম রেণুর দুই সন্তানের দাবি এমন নৃশংসভাবে আর কোনো হত্যাকাণ্ড না হোক এ দেশে। আর যেন কেউ এভাবে এতিম না হয়। সাজাপ্রাপ্তদের প্রত্যেককে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। যে অর্থ রেণু বেগমের দুই সন্তানকে দেয়ায় আদেশ দেন বিচারক।