এর আগে, গত রোববার (৩০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দুর্গাপুর পৌর শহরের পশ্চিম বালিকান্দি গ্রামের একটি মুরগির খোয়ার থেকে মেছো বিড়ালের ছানা দুটি উদ্ধার করেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রোববার বিকেলে বালিকাান্দি গ্রামে হাঁস-মুরগির ঘর থেকে বিড়ালের মতো দুটি বাচ্চা দেখতে পায় স্থানীয় বাসিন্দা বিএম শাহীন। এসময় তিনি বাচ্চাগুলোর কাছে গিয়ে ধরতে চাইলে শরীরের আকৃতি ও রং দেখে সন্দেহ হয়।
বিষয়টি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সেভ দ্য এনিমেলস অব সুসং’ এর স্বেচ্ছাসেবকদের জানালে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে বাচ্চাগুলো মেছো বিড়ালের ছানা বলে শনাক্ত করেন। পরে বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও পরিচর্যার জন্য দুর্গাপুর বন বিভাগের কার্যালয়ে রাখা হয়।
বিএম শাহীন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে আমার হাঁস এবং মুরগির খোয়ার থেকে হাঁস মুরগি হারিয়ে যাচ্ছিল। আমি ভেবেছিলাম হয়তো শিয়ালের কাজ। তাই ইচ্ছে করে হাঁস-মুরগি অনেকটা কমিয়ে দিয়েছি। গত রোববার বিকেলে মুরগির খোয়ার পরিষ্কার করতে গিয়ে ভেতরে বিড়ালের বাচ্চার মত দুইটি ছানা দেখতে পাই। পরে খোয়ারে ঘর থেকে বাচ্চাগুলো বের করতে গিয়ে দেখি তাদের নখ বড় বড় এবং গায়ের রং কিছুটা ভিন্নরকম। কিছুটা সন্দেহ হলে আমার চাচাতো ভাইকে বিষয়টা জানাই। পরে তারা বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করা সংগঠনের সদস্যদের জানালে তারা বাচ্চাগুলোকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তখন আমরা জানতে পারি এ বাচ্চাগুলো মূলত মেছো বিড়ালের ছানা।’
সেভ দ্যা এনিমেলস অব সুসং এর যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আনিসুল হক সুমন বলেন, ‘বন বিড়াল পাওয়া গেছে এমন সংবাদ শুনে পশ্চিম বালিকান্দি গ্রামে একটি মুরগির খোয়ার ঘর থেকে দুটি মেছো বিড়ালের ছানা উদ্ধার করি। ছানাগুলো বেশ বড়। মুরগির ঘরের ভেতরে জিআই তারের সঙ্গে পেঁচিয়ে থাকায় বাচ্চাগুলো চলাফেরা করতে পারছিল না এবং ভিতরেই আটকে যায়। আমরা বাচ্চাগুলোকে হাঁস-মুরগির ঘর থেকে উদ্ধার করি। পরে এগুলোর পরিচর্যা এবং পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য দুর্গাপুর বন বিভাগের অফিসে রেখে আসি। বাচ্চাগুলো একেবারে সুস্থ থাকায় সোমবার রাতে গহীন বনের জলাশয়ের ধারে মেছো বিড়ালের ছানাগুলো অবমুক্ত করা হয়।’
আরও পড়ুন:
তিনি বলেন, ‘আমরা এর আগেও ৫৯টি রেসকিউ অভিযানের মাধ্যমে অজগর, বিরল প্রজাতির লজ্জাবতী বানর, বনরুইসহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী উদ্ধার করেছি। এর আগে, চলতি বছরের ১৩ জুন সদর ইউনিয়নে আরও দুটি মেছো বিড়ালের ছানা উদ্ধার করি আমরা।’
দুর্গাপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মজনু প্রামানিক বলেন, ‘আমরা “সেভ দ্য এনিমেলস অব সুসং” এর স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে উপজেলার গহীন বনে মেছো বিড়ালের দুটি ছানা অবমুক্ত করেছি। বাচ্চাগুলো মোটামুটি বড় হওয়ায় এখন নিজেরাই নিজে থেকে শিকার করে খাদ্য চাহিদা পূরণ করতে পারবে। এজন্য আমরা বাচ্চা গুলোকে একটি জলাশয়ের ধারে অবমুক্ত করেছি। আর যেহেতু মেছো বিড়াল একটি নিশাচর প্রাণী। তাই আমরা দিনের পরিবর্তে রাতে প্রাণীগুলোকে অবমুক্ত করেছি যেন তারা নিরাপদে চলতে পারে এবং নিরাপদ স্থান খুঁজে নিতে পারে।’
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আস সাদিক বলেন, ‘আমরা স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন “সেভ দ্যা এনিমেলস অব সুসং” এর সদস্যদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছি। পরবর্তীতে এ মেছো বিড়ালের ছানাগুলো পুনরায় অবমুক্ত করার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছি। মেছো বিড়াল একটি বিরল প্রজাতির প্রাণী। এসব প্রাণী সাধারণত বড় জলাশয়, পুকুর ও হাওর অঞ্চলে বসবাস করে। এদের মূল খাবারই হলো মাছ। তবে বিভিন্ন সময় খাদ্যের সন্ধানে এরা লোকালয়ে চলে আসে এবং হাঁস-মুরগির খামারে ঢুকে পড়ে। এরা সাধারণত ইঁদুর, বিষধর সাপসহ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী খেয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। তবে এ প্রাণীর শরীরে কালো ছোপ ছোপ চিহ্ন থাকায় অনেক সময় মানুষ এটিকে চিতা বাঘ বা বাঘ বলে ভুল করে হত্যা করেন। প্রাণীটি একেবারেই নিরীহ প্রজাতির একটি প্রাণী। আমরা সচেতনতার মাধ্যমে সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি প্রাণীটির রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার জন্য।’





