আজ সকাল ৯টা থেকে জেলা পরিষদের মূল ফটক বন্ধ করে ব্যানার টানিয়ে দিয়ে তার সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এতে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও কর্মকর্তাদের এসময় কার্যালয়টিতে প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে আগে থেকেই মূল ফটকের অভ্যন্তরে সতর্ক পাহারায় অবস্থান নেয় পুলিশ।
এর আগে, হরতাল কর্মসুচির মুখে রাঙামাটি জেলা পরিষদ ওই নিয়োগ পরীক্ষা চতুর্থ বারের মতো স্থগিত ঘোষণা করে। এর জেরে ৮ ঘণ্টা পরই আন্দোলনকারীরা হরতাল কর্মসূচি স্থগিত করলেও ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
৬ দফা দাবি আদায়ে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানকে শনিবার (২২ নভেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময় বেধে দেয়া হয়। কিন্তু সুরাহা না আসায় আজ থেকে জেলা পরিষদ অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করা হয়েছে। দাবি বাস্তবায়ন না হলে আরও কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন ইমু বলেন, ‘আমরা কয়েক দিন ধরে লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছি যেন, চাকরি প্রার্থীরা মেধার ভিত্তিতে যোগ্য স্থানে নিয়োগ পান। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা প্রথা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সারাদেশের মতো নিয়োগে ৯৩ শতাংশ মেধা ও ৭ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করাসহ ৬ দফা দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন:
৬ দফা দাবি তুলে ধরেন রাঙামাটি কোটাবিরোধী ঐক্যজোটের সমন্বয়ক ইব্রাহিম রুবেল। তিনি বলেন, ‘৯৩ শতাংশ মেধা ও ৭ শতাংশ কোটার ভিত্তিতে নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে, প্রশ্নপত্র ফাঁস এড়াতে জনপ্রশাসন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কেন্দ্রীয়ভাবে প্রশ্নপত্র প্রনয়ণ করতে হবে, প্রশ্নপত্র প্রস্তুত শেষে জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে সরকারি ট্রেজারিতে সংরক্ষণ ও পরীক্ষা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে ট্রেজারি থেকে আনতে হবে, পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন জেলা প্রশাসকের তত্বাবধানে সম্পন্ন করতে হবে, উপজেলা কোটার ক্ষেত্রে আলাদা প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করতে হবে, নিয়োগ পরীক্ষা শেষে প্রার্থীদের রোল নম্বর ও ঠিকানা বাধ্যতামূলক প্রকাশ করতে হবে। এ দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
এদিকে রাঙামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শনিবার এমন পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে কাজল তালুকদার বলেন, ‘এরই মধ্যে দুটি পক্ষের দেয়া স্মারকলিপি পর্যালোচনা করা হয়েছে। তাদের দাবি যৌক্তিক। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে জেলা পরিষদের আইন অগ্রাধিকার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্প্রতি জাতীয় পর্যায়ে কোটা পুনর্বিন্যাসের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই দুই ব্যবস্থার মধ্যে কোনটি অনুসরণযোগ্য হবে, তার স্পষ্ট দিক নির্দেশনা পেতে মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত চাওয়া হচ্ছে। নির্দেশনা পেলে স্থগিত পরীক্ষা পুনরায় নেয়া হবে।’
তবে পার্বত্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এর সমাধানে ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগার কথা জানিয়েছে। কিন্তু তা আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে দীর্ঘ প্রক্রিয়া বলে মনে করছে। এরপর থেকেই মনে করা হচ্ছে, নির্বাচিত সরকার আসার আগে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যত হিমঘরে স্থান পাবে।
জেলা পরিষদের সহকারি প্রাথমিক শিক্ষকের এ নিয়োগে এবার ৫৩০টি শূন্যপদে আবেদন করেন ৬ হাজার ৬৪৮ জন প্রার্থী। এর আগে, এই নিয়োগ কার্যক্রমে নির্ধারিত লিখিত পরীক্ষা ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সালের ২০ মে এবং সর্বশেষ গেলো ১১ নভেম্বর এ নিয়োগ স্থগিত ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ২১ নভেম্বর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ২০ নভেম্বর থেকে টানা ৩৬ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী এ শিক্ষার্থীরা।





