সিলেট নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজারের পুরনো মার্কেট রাজা ম্যানশন। ২০১৯ সালে একাধিক ভূমিকম্পের পর সিটি করপোরেশনের জরিপে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত হয়। একইরকমভাবে সিলেটের সুরমা মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট, মধুবন সুপার মার্কেটসহ সাতটি বিপণিবিতানকে ভেঙে সংস্কার করার নির্দেশ দিলেও এখন কেবল রঙ পাল্টে ভবনের কার্যক্রম চালাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
ছয় বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা এসব ভবনের ব্যাপারে এখন নির্বিকার সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ফলে ভূমিকম্পপ্রবণ সিলেটে ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে এসব ভবন।
স্থানীয়রা জানান, গত দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ভূমিকম্প সিলেট অঞ্চলে হয়েছে। সেখানে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আছে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও পরবর্তীতে তা আর বাস্তবায়ন হয় না বলে জানান স্থানীয়রা।
সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, নানা সীমাবদ্ধতায় এতদিন অভিযান চলমান রাখা সম্ভব হয়নি। তবে নতুন করে এসবের বিরুদ্ধে আবার ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস সিটি প্রকৌশলীর।
সিসিক প্রধান প্রকৌশলী আলী আকবর বলেন, ‘যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা পর্যাপ্ত নয়। আমাদের সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আমরা পুনরায় এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করব।’
আরও পড়ুন:
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা সিলেটে যেখানে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার কথা, ঠিক আছে তার উল্টো চিত্র। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূ-প্রকৃতিগতভাবে দেশে ঝুঁকিপ্রবণ এলাকার তালিকায় সিলেটের অবস্থান ওপরের দিকে। ভূগর্ভস্থ ইন্ডিয়ান টেকটনিক প্লেটের একটি ফাটল, ডাউকি ফল্টের অবস্থান এ জনপদের খুব কাছাকাছি থাকায় শঙ্কাটা বেশি। তাই ভূমিকম্পের জন্য আলাদা সতর্কীকরণ কেন্দ্র গড়ে তোলার পরামর্শ তাদের।
শাবিপ্রবি পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগ অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমদ বলেন, ‘সিলেট এবং এর আশেপাশে কিছু ফল্ট আছে, সিলেট ফল্ট আছে, বাংলাদেশে আরও ভেতর মধুপুর ফল্ট আছে। সবগুলো ফল্ট ভূমিকম্প ঘটাতে পারে।’
শাবিপ্রবি পুর ও পরিবেশ কৌশল বিভাগ অধ্যাপক ড. জহির বিন আলম বলেন, ‘একটি আর্থকুয়াক সেন্টার বসানো উচিত। যেখানে সারাক্ষণ মনিটর হবে। সেটি নিয়ে অ্যানালাইসিস হবে, তারপর সেখান থেকে কনক্লুশনে আসবে।’
নানান সতর্কতার পরও উদাসীনতায় যেমন ঝুঁকি বাড়ছে তেমনি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে একের পর এক গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সও বলছে, লোকবল সংকট আর গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত নগরায়নই সংকট মোকাবেলায় প্রধান বাধা।
সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম ভূঞাঁ বলেন, ‘রাস্তা সরু, একটি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হবে। এরপর অপরিকল্পিতভাবে কাজ করার কারণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে। পুরনো ভবনগুলোর কারণে সেগুলো ভেঙে যেতে পারে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটের বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় শুধু সচেতনতা বাড়ালেই চলবে না বরং যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ ও কমিউনিকশেন শক্তিশালীকরণে নজর দিতে হবে সরকারকে।




