শেরপুরে চলছে দু’দিনের ফাতেমা রানীর তীর্থ উৎসব

মোমবাতি জ্বলিয়ে প্রার্থনা করছেন তীর্থ যাত্রীরা | ছবি: এখন টিভি
1

শেরপুরের নালিতাবাড়ীর বারোমারি সাধু লিওর ধর্মপল্লীতে শুরু হয়েছে দু’দিনের ফাতেমা রানীর তীর্থ উৎসব। ৩০ অক্টোবর ও ৩১ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী ফাতেমা রাণীর তীর্থোৎসব অনুষ্ঠিত হবে। এ উৎসবে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছে ৫০ হাজারেরও বেশি ক্যাথলিক খ্রিস্টভক্ত। এছাড়া এ উৎসব ঘিরে বসেছে বিভিন্ন পণ্যের মেলা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিক্রি হবে প্রায় আড়াই কোটি টাকার পণ্য।

শেরপুরে রোমান ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের এ ধর্মপল্লীটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৪২ সালে। পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর আদলে ৪২ একর জমি জুড়ে স্থাপন করা হয় এ তীর্থ স্থানটি। যা ১৯৯৮ সালে ঘোষণা করা হয় ফাতেমা রানীর তীর্থস্থান হিসেবে । সেই থেকে প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার একটি মূল সুরের ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে দু’দিনব্যাপী ফাতেমা রানীর তীর্থ উৎসব।

প্রতি বছরের মত মতো এবছরও দুদিনের তীর্থ উৎসবে যোগ দিতে ধর্মপল্লীতে এসেছেন বিভিন্ন বয়সী খ্রিস্ট ভক্তরা।

এবছর পুনর্মিলন ও পাপ স্বীকারের মধ্যে দিয়ে শুরু হয় কর্মসূচি। হাজারো তীর্থযাত্রী নিজেদের পাপ থেকে মুক্তি পেতে মোমবাতি জ্বালিয়ে আলোর মিছিল নিয়ে উঁচু-নিচু পাহাড়ি টিলার আড়াই কিলোমিটার পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে।

তীর্থ যাত্রীদের একজন বলেন, ‘আমি প্রতিবছরই এখানে আসি। পরিবারের সঙ্গে এসে প্রার্থনা করি।’

অন্য আরেকজন তীর্থ যাত্রী বলেন, ‘মা মারিয়ার কৃপায় আমরা অনেক কিছু পেয়েছি।’

এদিকে তীর্থকে কেন্দ্র করে শতাধিক স্টলে নানা পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনা ভালো হওয়ায় খুশি ক্রেতা ও বিক্রেতারা।

আরও পড়ুন:

বিক্রেতাদের একজন বলেন, ‘ফুল, কসমেটিক্স নিয়ে এসেছি। মোটামুটি অনেক ভালো বেচাকেনা হচ্ছে।’

এবারের তীর্থোৎসবে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পোপের প্রতিনিধি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভ্যাটিকান সিটির রাষ্ট্রদূত। তীর্থোৎসবটি ২৭ বছরের জুবিলী উৎসব হিসেবে পালন হওয়ায় এর গুরুত্ব আরও বেড়েছে বলে জানান ধর্মীয় নেতারা। আর, তীর্থ উৎসবে নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ নিশ্চিতে সচেষ্ট রয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।

ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশ বিশপ পনেন পৌল কুবি বলেন, ‘হিংসা, প্রতিহিংসা, স্বার্থপরতা থেকে তাদের মন পরিবর্তনের জন্য, প্রার্থনা করার জন্য আমাদের কুমারী মারিয়া তিন ছেলে-মেয়েকে বলেছিলেন যেন এখানে গির্জা নির্মাণ করা হয়। প্রার্থনা করা হয়। মানুষ যেন মন পরিবর্তন করে।’

শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এটি আমাদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে গেছে। শুধুমাত্র খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী নয় অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষ সহযোগিতা করে। এটি আমাদের অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতির অনন্য এক উদাহরণ।’

শেরপুরের ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরীর অনুকরণে স্থাপিত হওয়ার পর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে খ্রিস্ট তীর্থযাত্রীরা এখান আসেন পাপ থেকে মুক্তির আশায়।

এফএস