আবুল কালামের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের ঈশ্বরকাঠি গ্রামে। কিশোর বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়েছিলেন তিনি। বড় ভাই-বোনদের কাছে বেড়ে উঠেছিলেন। শৈশব থেকেই ছিল কষ্টের সঙ্গী, কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি তিনি। বরং সংসারের হাল ধরেছিলেন নিজ কাঁধে।
পড়ুন
২০১২ সালে জীবিকার তাগিদে যান মালয়েশিয়ায়। সেখান থেকে ফিরে ২০১৮ সালে পাশের গ্রামের আইরিন আক্তারকে বিয়ে করেন। সংসারে এসেছে দুই সন্তান। ছয় বছরের এক ছেলে ও চার বছরের এক মেয়ে। স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পাঠানটুলীতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। ঢাকার মতিঝিলের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতেন তিনি। প্রতিদিনের মতো রোববারও সকালে কাজের উদ্দেশ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। আর ফিরলেন না।
দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে যায়। ভারী ওই প্যাডের নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান আবুল কালাম। পরে গণমাধ্যমের খবরে তার পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন এই মর্মান্তিক ঘটনার কথা। আবুল কালামের অকাল এই মৃত্যুর জন্য মেট্রোরেলের নির্মাণ ত্রুটিকেই দায়ী করছেন স্বজনরা।
পড়ুন
গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরকাঠিতে এখন নিস্তব্ধতা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তার ভাই-বোন ও স্বজনরা। বড় বোন সেলিনা বেগম চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘আমার ভাইটি সারা জীবন কষ্ট করেছে। কিশোর বয়সে বাবা–মাকে হারিয়েছে। আজ দুই ছোট শিশুকে রেখে সে নিজেও চলে গেল। এখন ওদের ভবিষ্যৎ কী হবে?’
বড় ভাই খোকন চোকদার বলেন, ‘এক মাস আগেই গ্রামে এসেছিল কালাম। তখন কে জানত ওটাই হবে শেষ দেখা! এখন ফিরবে শুধু ভাইয়ের প্রাণহীন দেহ।’
গ্রামের বন্ধুরা বলছেন, হাস্যোজ্জ্বল, পরিশ্রমী আর পরিবারপ্রেমী আবুল কালাম ছিলেন সবার প্রিয়। তার মৃত্যুতে শোকে মুহ্যমান গ্রাম ঈশ্বরকাঠি।
পড়ুন
কালামের মত এমন করুণ পরিণতি যেন কারো জীবনে না ঘটে, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের। দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবারের কাছে কালামের মরদেহ হস্তান্তরের দাবি স্বজনদের।





