অনেকটা রাতারাতি পাল্টে যাওয়া এ চিত্র ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সরাইল-বিশ্বরোড মোড় অংশের। সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের পরিদর্শন ও যানজট নিরসনে দেওয়া নির্দেশনার পর নিত্যদিনের যানজট যেন নিমিষেই শেষ! এতে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন চালক ও যাত্রীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত বিদ্যমান মহাসড়কটি চারলেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত করার প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদনের পর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০ সালে। ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তবে শুরু থেকেই নানা সংকটের মুখে পড়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটি। এতে কাজ চলে ধীরগতিতে, ফলশ্রুতিতে ৫ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ। কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে মেয়াদ- যা শেষ হচ্ছে আগামী ২০২৭ সালের জুন মাসে।
তবে আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন প্রকল্পের ১২ কিলোমিটার অংশ রয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশের কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যে মাত্র ৬২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আর্থিক জটিলতার কারণে এই অংশের কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ রাখে ঠিকাদার। ফলে সড়কে নিয়মিত সংস্কার কাজ না হওয়ায় খানাখন্দ তৈরি হয়। যান চলাচলে ধীরগতি দেখা দেয়। এতে করে প্রতিনিয়ত আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল-বিশ্বরোড পর্যন্ত অংশে তীব্র যানজট তৈরি হতো।
যানজটের কারণে ১২ কিলোমিটার সড়ক পাড়ি দিতে যানবাহনগুলোর সময় লাগত ৪-৬ ঘণ্টা। কোনো কোনো সময় তা ৮-১০ ঘণ্টাও লেগেছে। এতে করে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হতো দূর-দূরান্তের যাত্রীদের। এ অবস্থায় সম্প্রতি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে ১২ সদস্যের একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয় আশুগঞ্জ গোলচত্বর ও সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ের সংস্কার কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
আরও পড়ুন:
সর্বশেষ গত ৮ অক্টোবর মহাসড়কের বেহাল অংশ পরিদর্শনে এসে নিজেই ভয়াবহ যানজটের কবলে পড়েন সড়ক পরিবহন ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। পরে গাড়ি ফেলে মোটরসাইকেলে করে সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে আসেন উপদেষ্টা। যানজটের জন্য বেহাল মহাসড়কের চেয়ে ট্রাফিকের অব্যবস্থাপনাকে বেশি দায়ী করে নির্দেশনা দেন মনিটরিং কমিটির ১২ কর্মকর্তাকে সার্বক্ষণিক সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে দায়িত্ব পালনের। উপদেষ্টার নির্দেশনার পর পাল্টাতে শুরু করে মহাসড়কের চিত্র। সড়কে শৃঙ্খলা আনতে বিভাজক দেয়া হয়েছে। এতে করে উল্টোপথে আর কোনো গাড়ি না আসছে না।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘুরে দেখা গেছে, সরাইল-বিশ্বরোড মোড় ও আশপাশে কোনো যানজট নেই। তবে যানবাহনের কিছুটা চাপ রয়েছে। এ অংশটিতে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলাচল করছে। এছাড়া আশুগঞ্জ গোলচত্বরেও যান চলাচল স্বাভাবিক। উপদেষ্টার নির্দেশনার পরদিন (৯ অক্টোবর) সরাইল-বিশ্বরোড মোড়ে কোনো কর্মকর্তাকে দেখা না গেলেও রোববার অধিকাংশ কর্মকর্তাকেই দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। অস্থায়ী সংস্কার কাজও চলছে দ্রুত গতিতে।
হানিফ মিয়া নামে ঢাকা-সিলেট রুটের এক বাস চালক জানান, গত কয়েক মাস যানজটের কারণে অমানবিক কষ্ট করতে হয়েছে। ১০-১২ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে সিলেট পৌঁছানো যায়নি। কিন্তু গত দুইদিন ধরে আর আগের সেই যানজট সেই। এখন নিমিষেই বিশ্বরোড মোড় ও আশুগঞ্জ গোলচত্বর পার হওয়া যাচ্ছে।
রাকিব হোসেন নামে এক যাত্রী জানান, সড়ক বিভাগ এবং ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে রাস্তার কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। আপাতত যানজট নিরসন হলেও এর স্থায়ী সমাধান দরকার। এজন্য দ্রুত সড়কের নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় আবারও যে কোনো সময় যানজটের কবলে পড়তে হবে।
সরাইলের খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিশ্বরোড মোড়ের মহাসড়কের দুই দিকে সড়ক বিভাজক দেয়া হয়েছে। উল্টো পথে কোনো গাড়ি এসে নে যানজট তৈরি না করে- সেদিকে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরতা হাইওয়ে পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।
চারলেন মহাসড়ক প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, তিনটি প্যাকেজে চলছে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ। প্যাকেজ-১ এর কাজ ৬২ শতাংশ শেষ হয়েছে। আবারও নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। আর প্যাকেজ-২ এর কাজ শেষ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। বিভিন্ন জটিলতায় প্যাকেজ-৩ এর কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। সব মিলিয়ে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫০ শতাংশের কিছু বেশি।
আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন প্রকল্পের ব্যবস্থাপক (প্যাকেজ-১) মোস্তাকুর রহমান ভূঁইয়া জানান, মহাসড়কে যানজট এখন নেই বললেই চলে। বেহাল অংশের সংস্কার কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজে ফিরতে শুরু করেছে। প্রকল্পের সকল জটিলতা কাটিয়ে আবারও কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে বর্ধিত সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে।





