নারায়ণগঞ্জে বাউল শিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যু; আটক স্বামী

হাসপাতালে নিহত বাউল শিল্পী আনিকা
হাসপাতালে নিহত বাউল শিল্পী আনিকা | ছবি: এখন টিভি
2

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় আনিকা আক্তার (১৯) নামে এক বাউল শিল্পীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আজ (শনিবার, ৪ অক্টোবর) ভোর আনুমানিক ৩টায় ফতুল্লার ভুইগড় এলাকার ভাড়া বাসা থেকে অনিকাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তার স্বামী হাবিবুর রহমান স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের দাবি আনিকাকে হত্যা করেছে তার স্বামী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাবিবুর রহমানকে আটক করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

নিহত আনিকা আক্তার অনিকা (১৯) মাদারীপুর জেলার মোস্তফাকুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে। আনিকার মৃত্যুর বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সন্দেহ হলে হাসপাতাল থেকে পুলিশে খবর দেয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে আনিকার মরদেহ উদ্ধার করে তার স্বামী হাবিবুর রহমানকে আটক করে। পরে অনিকার মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়।

অনিকার বাবা জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, ৫ বছর আগে অনিকাকে হাবিবুর ভালোবেসে বিয়ে করেন। তাদের বিয়ের পর থেকেই দাম্পত্য কলহ ছিলো। ঝগড়া হলেই হাবিব আবার বিয়ে করতো। এভাবে হাবিব পর্যায়ক্রমে অনিকার আগে ৪টি বিয়ে করেছে। ৪ মাস আগে অনিকার একটি কন্যা সন্তান হয়েছে। সেই সন্তান কোলে নিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত একাধিক বাউল ক্লাবে গিয়ে গান করতেন। সারারাত গান গেয়ে যে টাকা আয় হতো তা জোর করে নিয়ে যেত হাবিবুর রহমান।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, সম্প্রতি মালা নামে এক বাউল নারী শিল্পিকে হাবিবুর বিয়ে করেন। হাবিবুরের কাছে সেই বিয়ের সত্যতা জানার চেষ্টা করেন অনিকা। এ নিয়ে হাবিবুর ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করে গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর চলে যায়। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে অনিকাকে তালাকের প্রথম নোটিশ পাঠায়। অনিকা সেই নোটিশ নিয়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে নালিশ করেন। এতে হাবিবুর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে স্বর্ণা নামে আরেকজন নারী বাউল শিল্পিকে দিয়ে অনিকাকে হত্যার চেষ্টা করেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে অনিকার বাসায় গিয়ে হামলা চালায় স্বর্ণা। এ সময় বেধড়ক মারধর করে অনিকার পরিহিত নাকের গলার ও হাতের স্বর্ণের অলংকার খুলে নেয়। তখন অনিকার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে অনিকাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়। ওইসময় কৌশলে স্বর্ণা পালিয়ে যায়।

আরও পড়ুন:

অনিকার বাবাসহ তাদের পরিবারের দাবি পরিকল্পিত ভাবে অনিকাকে হত্যা করে তা আড়াল করতেই হাবিবুর মৃত দেহ নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন নিহতের পরিবার।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান জানান, অনিকাকে সে হত্যা করেনি। গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর থেকে এসে অনিকার খোঁজে তাদের ভাড়া নেয়া ভুইগড়ের ফ্ল্যাট বাসায় যায়। সেখানে গিয়ে দরজায় অনেক সময় ধাক্কা ধাক্কি করেন। তখন দরজা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে জানালার গ্রিলের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় অনিকার নিথর দেহ ঝুলতে দেখেন বলে দাবি করেন তিনি। এরপর আনিকাকে নিয়ে সাইনবোর্ড প্রোঅ্যাকটিব হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাবিবুর রহমান বলেন, ‘অনিকাকে যে তালাকের নোটিশ পাঠিয়েছি সেটি ভুয়া তাকে ভয় দেখানোর জন্য পাঠিয়ে ছিলাম।’

ফতুল্লা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ময়না তদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে নিহতের পরিবার দাবি করছে পারিবারিক কলহের জের ধরে অনিকাকে হত্যা করেছে তার স্বামী হাবিবুর রহমান(২৫)। তবে এখনো পর্যন্ত তারা লিখিত কোন অভিযোগ দেয়নি থানায়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমরা হাবিবুরকে আটক করেছি। হাবিবুর ও অনিকা ফতুল্লার ভুইগড় এলাকায় মাস্টারের ভাড়াটিয়া বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন।’

ইএ