সেই কাক ডাকা ভোরে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা থেকে রিকশা নিয়ে নগরীতে এসেছেন সালাম মিয়া। ঈদের আগে যা রোজগার করেছিলেন সংসারের সদাই-পাতি, পরিবারের সদস্যদের নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়েই ফুরিয়েছেন সর্বসাকুল্য। ঈদ পরবর্তী সময় কিভাবে চলবেন তা নিয়ে অনিশ্চিয়তা সে, তাই ঈদের দিন রিকশা চালালে হয়তো পাবেন বাড়তি কিছু টাকা।
তবে খালি পেটে রিকশার চাকায় আর কতদূর ভর করা যায়, ঈদ উপলক্ষে নগরীর সব হোটেল রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকায় খাবার নিয়ে সবচেয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। তবে পেটে ক্ষুধা নিয়ে খুব একটা বেশি সময়ে পার করতে হয়নি। দুপুর ১২ টার পরেই নগরীর কাচিঝুলি মোড় পর্যন্ত আসতেই ১ পেকেট বিরিয়ানি, ১টা সেদ্ধ ডিম এবং বিশুদ্ধ পানিও হাতে পেলেন তিনি।
শহরে জীবিকার তাগিদে চলাচল করা রিকশা, ব্যাটারি চালিত অটোচালকরাসহ শ্রমজীবী মানুষদের ঈদে একবেলা পেটপুরে খাওয়াতে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন একদল বন্ধুরা। মূলত পবিত্র ঈদুল ফিতর এর দিন রিকশা অটো রিকশাচালক ও শ্রমজীবীদের কথা চিন্তা করে তাদের মাঝে দুপুরে একবেলা খাদ্য বিতরণ করেন ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের এইচএসসি ১৯৯৫ ব্যাচ ও শুভাথী সংগঠন।
বেলা সাড়ে ১২টায় নগরীর কাচিঝুলি মোড় এলাকায় শহরের অন্তত ১০০ রিকশাচালক, শ্রমজীবী মানুষ দুপুরে একবেলা খাবার পেয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেন। এছাড়া নিজেরা বন্ধুরা মিলে আড্ডার ছলে শ্রমজীবীদের জন্য এমন আয়োজন করতে পেরেও আনন্দিত ৯৫ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীরা।
শরিফুল ইসলাম, রতন,ফাহিমরা বলেন, প্রতিবছরই ঈদের সব বন্ধু-বান্ধব একসঙ্গে মিলিত হই আড্ডা দেই। কিন্তু আমরা একটা বিষয় খেয়াল করি ঈদের সময় এই রিকশাচালক, শ্রমজীবী যারা মানুষ রয়েছেন পুরোটা দিন শহরে তারা না খেয়েই কাটান। কারণ ঈদের সময় কোন রেস্টুরেন্ট হোটেল খোলা থাকে না বললেই চলে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নেই ঈদের দিন এই সমস্ত রিকশাওয়ালা অটোচালক মানুষ যারা রয়েছেন তাদেরকে বিনামূল্যে এক বেলা খাবার খাওয়াবো। সেই লক্ষ্য থেকে প্রতিবছরই এমন আয়োজন আমরা করে থাকি। বিগত দিনগুলোতেই আরও বড় পরিসরে এমন আয়োজন করার একটা প্রচেষ্টা আমাদের রয়েছে।
খাবার পেয়ে আব্দুস সালাম রমজান আলী বলেন, 'বাড়ি থেইকা বাইর হইছি রিকশা লইয়া, খাবার পামু না পামু জানতাম না, এইহানে আইয়া খাবার পাইলাম। যাক রিকশা আর কতক্ষণ চালাইন যাইবো, খুব বালা হইছে।'