রাজনীতিতে খালেদা জিয়া যেভাবে আপসহীন নেতা হয়ে ওঠেন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া | ছবি: এখন টিভি
1

আন্দোলন, গণদাবির প্রতি নিষ্ঠা, দলীয় নেতৃত্বে নিরলস পরিশ্রম— সব মিলিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন রাজনীতির সবচেয়ে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক অস্থিরতার নানা সংকটময় মুহূর্ত, সব ক্ষেত্রেই তিনি দেখিয়েছেন দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস। কঠিন সময়েও আপসহীন অবস্থান, কর্মীদের প্রতি আস্থা এবং জনগণের ইচ্ছার প্রতি শ্রদ্ধা তার নেতৃত্বকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন থেকে শুরু করে কারাবন্দি জীবনের সীমাবদ্ধতা সব বাধা অতিক্রম করে তিনি রাজনৈতিক অঙ্গনে সৃষ্টি করেছেন এক আলাদা ভূমিকা। আন্দোলনকে শক্তিশালী করা এবং জাতীয় রাজনীতিতে ভারসাম্য রক্ষা— এ প্রতিটি ক্ষেত্রে তার অবস্থান ছিল কেন্দ্রে। তাই সময়ের পরিক্রমায় খালেদা জিয়া হয়ে উঠেন আপসহীন নেত্রী।

দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী থেকে দেশের সরকার প্রধান, আবার সেখান থেকে কারাবন্দি জীবন আর এ দীর্ঘ পথচলাই তাকে পরিণত করেছে আপসহীন-অদম্য এক নেত্রীতে।

সংকট যত এসেছে, তিনি তত দৃঢ় হয়েছেন তিনি। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছিল তার রাজনৈতিক দর্শনের প্রথম পাঠ। তৃণমূলের ভাঙা সড়ক, দুর্গত মানুষের কান্না সবকিছুর মাঝেই তিনি নিজের রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছেন। আর মানুষের সেই আস্থার জোরেই রাজনীতিতে আসার মাত্র এক দশকের মাথায় বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইতিহাস রচনা করেন তিনি।

১৯৮৫ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ নিয়েও যখন দাবি পূরণ হলো না, তখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় ধরনের টানাপোড়েন তৈরি হয়। ঠিক সেই সময়—১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিল আওয়ামী লীগসহ অনেক দল। কিন্তু খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত ছিল স্পষ্ট ও অনড়। তার নেতৃত্বে বিএনপি ভোট বর্জন করায় আন্দোলনের ভিত আরও শক্ত হয়। তার আপসহীন ভাবমূর্তিকে এতে আরও দৃঢ় হয়ে উঠে।

তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি জয় পায়। এরপর ২০০১ এ আবারও জয় পান বেগম জিয়া। ২০০৭ সালে দুর্নীতি মামলায় ১ বছর কারাবাস ও ২০০৮ সালে বিরোধী দলে থেকেও সংসদে সজাগ ভুমিকায় ছিলেন তিনি। ’১৪ এর নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আবারও বয়কট করে নির্বাচন এবং আন্দোলনে নামে। ’১৮ পরবর্তী সব নির্বাচনে বয়কট করে আন্দোলনে অনড় থাকেন তিনি।

২০০৭ সালের ‘মাইনাস টু’ ফরমুলায় সাহসী পদক্ষেপ কিংবা ২০১৪ সালে বালুর ট্রাক দিয়ে অবরুদ্ধ করার চেষ্টায় তার আপসহীন ভুমিকা আবারও তার নিষ্ঠার কথা জানান দিয়েছে।

অন্যদিকে মামলা ও নির্যাতনের পরও বিদেশে যাননি তিনি। দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত কারাভোগ করেন এরপর অসুস্থতার জন্য আদেশে নির্বাহী আদেশে বাড়ি ফিরলেও বন্ধি থাকতে হয় গুলশানে বাসায়৷ পাননি পর্যাপ্ত চিকিৎসক।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ঊর্ধ্বে দল মতের ভালোবাসায় সিক্ত হন। চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গেলেও ফিরে ছয় মাসের মাথায়। বিমানবন্দরে থেকে গুলশানের বাসায় ফেরার সংবর্ধনা জানান দেয় দেশের মানুষের কাছে খালেদা জিয়া কতটা জনপ্রিয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের মাথায় সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল বেগম জিয়া। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হন।

রাষ্ট্রক্ষমতার ভিতরে আর বাইরে সময়ের কঠিন পরীক্ষায় যে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে, ইতিহাস তাকেই বলে আপসহীন। আর তাই খালেদা জিয়া আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অনমনীয়, আপসহীন নেত্রীর প্রতীক।

এসএইচ