আতঙ্কের নতুন নাম গৃহকর্মী, দারোয়ান ও ড্রাইভার; বাড়ছে খুন-চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধ

বোরকা পরে গৃহকর্মীর প্রবেশ ও স্কুল ড্রেস পরে বাসা ত্যাগ, নিহত মেয়ে ও মা | ছবি: এখন টিভি
0

মা-মেয়েকে খুন করে লাপাত্তা গৃহকর্মী আয়শা আক্তার। শুধু নাম ছাড়া কিছুই জানে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ৪ দিন আগে কাজ যোগ দেয়া আয়শা মৌখিকভাবে যা বলেছে সবই প্রাথমিকভাবে মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। অথচ নতুন গৃহকর্মী নেয়ার আগে স্থানীয় থানায় সব তথ্য দেয়ার কথা ছিল পরিবারগুলোর। থানাগুলোতে কি আদৌ সে তথ্য আছে?

বছরের পর বছর ধরে ঘরের আস্থার জায়গায় থাকে গৃহপরিচারিকা, দারোয়ান ও ড্রাইভার। কিন্তু সেই বিশ্বাসই কখনও কখনও তৈরি করে মৃত্যু ফাঁদ। আবার কখনও তাদের লোভের ফাঁদে পড়ে সব হারাচ্ছে পরিবার। বিভিন্ন স্থানে এমন লোমহর্ষক ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে রাজধানীতে।

মোহাম্মদপুরের শাজাহান রোডে মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনার পর এখনও গ্রেপ্তার হয়নি আয়েশা আক্তার। কেন?

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন বলেন, ‘চারদিন হয়েছে এ কাজের মহিলাকে নিয়োগ দিয়েছে। কোনো তথ্য ছিল না ওনাদের কাছে, কোনো এনআইডি ছিল না। আমরা বের করার চেষ্টা করছি।’

৪ ডিসেম্বর গৃহপরিচালিকার কাজ নেয়ার সময় মৌখিক তথ্যে বিশ্বাস করেছিল পরিবারটি। এ ছোট্ট ভুলের মাসুল গুনতে হয়েছে দুটি প্রাণের বিনিময়ে। কিভাবে গৃহপরিচালিকা সংগ্রহ করে রাজধানীর অধিকাংশ পরিবার সে বিষয়ে এখন টিভির সঙ্গে কথা বললেন কয়েকজন।

একজন বলেন, ‘কোন জায়গার ওইটা জানি আর কার কার কাজ করে। আর কিছু জানিনা।’ আরেকজন বলেন, ‘দেখা গেল ভোটার আইডি কার্ড চেয়েছি সে বললো দুইদিন পর দিচ্ছি।’

জানা গেলো কেউ গ্রামের স্বজন, বন্ধ, প্রতিবেশী অথবা দারোয়ানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরিবারের খোঁজ পান গৃহপরিচালিকা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মৌখিক নাম ঠিকানা ছাড়া আর কোনো তথ্যই থাকে না পরিবারের কাছে। মাসিক ভিত্তিতে বাড়ির মালিকের তথ্য হালনাগাদ করে দেয়ার কথা থানাগুলোর।

এক অধিবাসী বলেন, ‘কেউ বলেও নাই আপনারা এসব তথ্য রাখবেন বা জমা দিবেন।’ আরেকজন বলেন, এক বুয়া আরেক বুয়ার বিষয়ে বলে আপা রাখেন ভালো আছে। কিন্তু তার কোনো কাগজ নাই, ডকুমেন্ট নেই এভাবেই চলছে।’

গৃহকর্মী বা দারোয়ানের নাম-পরিচয়, ঠিকানা এবং ছবি থাকার কথা রাজধানীর থানাগুলোতে। তবে আদৌ এসব তথ্য থানাগুলোতে রয়েছে কি না তা জানতে ধানমন্ডি থানায় গেলে সেখানকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। গৃহ-পরিচালিকার তথ্য আছে কি না তাও জানে না ডিউটি অফিসার। পল্টন থানাতেও একই চিত্র।

যদিও ডিএমপি মুখপাত্র বলছেন সব ধরণের তথ্য হালনাগাদ রয়েছে তাদের।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেসন্স বিভাগের উপ-কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, ‘নগরবাসীর তথ্য চেয়ে আমরা কাজ করছি এবং বেশ কিছু তথ্য আমাদের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে। যেকোনো ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে এসব তথ্য আমাদের সহায়তা করে। এছাড়াও কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়ে গেলে এসব তথ্য আমরা কাজে লাগাতে পারি।’

বিশ্বাসের সম্পর্ক যতই গভীর হোক, নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন থাকা উচিত। রাজধানীর মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনা হয়তো অনেককেই নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে।

এএইচ