ঢাকাকে ঘিরে রয়েছে একাধিক শক্তিশালী ফল্টলাইন—দাউকি ফল্ট, মধুপুর ফল্ট, ভারত ও ইউরেশিয়ান প্লেটের মধ্যকার বিশাল প্লেট বাউন্ডারি ফল্ট, নরসিংদী ফল্ট, জামালপুর–ময়মনসিংহ অঞ্চলের নতুন ফল্ট সিস্টেম এবং কলকাতা সিসমিক করিডোরের বিস্তৃত সম্প্রসারণ। পুরু পললস্তরের নিচে লুকিয়ে রয়েছে আরও অসংখ্য অজানা বা অচিহ্নিত ফল্ট; ফলে ঝুঁকিটা শুধু বাস্তবই নয়—অপূর্বভাবে অনিশ্চিত ও বিপজ্জনক।
বৈজ্ঞানিক মত এককথায় পরিষ্কার, বাংলাদেশ ভূমিকম্প-হুমকির অধীনে এবং ঢাকা—এর ঘনবসতি, দ্রুত নগরায়ণ ও নিয়ন্ত্রণহীন নির্মাণব্যবস্থার কারণে—বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শহরগুলোর একটি। এই প্রবন্ধে উপস্থাপন করা হলো ঢাকার নিকটে ৭.০ বা তার বেশি মাত্রার কোনো ভূমিকম্প হলে সম্ভাব্য প্রভাব—এটি কাল্পনিক, কিন্তু সম্পূর্ণ বিজ্ঞানভিত্তিক। এটি গল্প নয়, এটি সতর্কীকরণ।
এক নগরীর প্রান্তসীমা—একটি Mw 7.0+ ভূমিকম্প ঢাকাকে কী করতে পারে?
ঢাকার ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৭ মাত্রার বেশি শক্তির ভূমিকম্প হলে এর প্রভাব হবে অকল্পনীয়। বৈশ্বিক দুর্যোগ মডেল অনুসারে, ঢাকার ৭ লাখের বেশি ভবন—যা মোট ভবনের এক-তৃতীয়াংশ—ধসে পড়বে বা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যাবে। এই ভবনগুলোর একটি বড় অংশেই রয়েছে পরিবার, স্কুল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, পোশাক কারখানা ও আবাসিক কমপ্লেক্স।
তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যু হতে পারে ২ লক্ষাধিক মানুষের, এবং ১০ লক্ষের বেশি মানুষ গুরুতর আহত হতে পারে। সারা দেশে ৩ কোটির বেশি মানুষ নিরাপদ বাসস্থানের বাইরে চলে যেতে পারে।
ঢাকার সরু রাস্তা, জনসংখ্যার অতি-ঘনত্ব, বিশৃঙ্খল নগর গঠন এবং আশ্রয়স্থলের অভাব পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলবে। বিশ্বের অনেক শহরের যেখানে প্রশস্ত রাস্তা বা উন্মুক্ত মাঠ আছে, ঢাকা সেখানে মানুষকে রক্ষা করার পরিবর্তে আটকে ফেলবে।
গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেমের বিপর্যয়: খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ
জরুরি উদ্ধার ও টিকে থাকা—শুরুতেই এক হারানো যুদ্ধ
ভূমিকম্পের পর আটকে থাকা মানুষের জীবন রক্ষায় প্রথম ৩০ মিনিটই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দুই দিনের পরে বেঁচে থাকার হার কমে ৪০ শতাংশ, আর পাঁচ দিনের পরে তা নেমে আসে ৭ শতাংশের নিচে।
ঢাকার বাস্তবতা এখানেই নির্মমভাবে সীমাবদ্ধ:
- মাত্র ১৭টি ফায়ার স্টেশন, ৩ কোটির শহরে
- প্রতি স্টেশনে মাত্র ৩–৪টি হালকা উদ্ধার সরঞ্জাম
- পুরো মহানগরে মোট ২০টি Rescue Tender
- মাত্র ৪৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক, যাদের প্রশিক্ষণ সীমিত
৭ লাখ ধসে যাওয়া ভবনের বিপরীতে প্রয়োজন হতো অন্তত ৭ লাখ উদ্ধার দল (প্রতি দলে ৩০ জন ধরে)। বাস্তবে অসংখ্য দুর্গত স্থানে পৌঁছাতে ৭–১০ দিন পর্যন্ত সময় লাগবে—যা সম্ভাব্য জীবিতদের বাঁচানোর সময়সীমার বহু অতীত।
এটি কেবল ঘাটতি নয়—এটি সামগ্রিক সক্ষমতার একটি পূর্ণাঙ্গ ধস।
এখানেই বহু গুরুতর প্রশ্ন উঠে আসে:
- ফায়ার সার্ভিস একা কি এই বিপুল উদ্ধারকার্য পরিচালনার জন্য যথেষ্ট?
- যদি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী, পুলিশ, আনসার ও বিজিবি যোগ দেয়—তবে তাদের কি পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম আছে?
- উদ্ধারকারীরা যেসব ভবনে প্রবেশ করবে—সেগুলো কতটুকু নিরাপদ?
- সিটি করপোরেশন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে উদ্ধার-পরিকল্পনা কতটা প্রস্তুত?
এ প্রতিটি প্রশ্নই আমাদের প্রস্তুতির ভঙ্গুর বাস্তবতাকে উন্মোচিত করে।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা—এক মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি
ধরে নেওয়া যাক গুরুতর আহত হবে ১০ লক্ষাধিক মানুষ। তখন পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ:
- দেশের অধিকাংশ হাসপাতাল আংশিক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে
- বাংলাদেশে নেই পর্যাপ্ত মোবাইল হাসপাতাল, ফিল্ড ICU, বা ইমার্জেন্সি সার্জিক্যাল ইউনিট
- রক্ত, ওষুধ ও জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জামের সরবরাহ মুহূর্তেই ভেঙে পড়বে
- সহজে চিকিৎসাযোগ্য হাজার হাজার আঘাত—শুধুমাত্র চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে—প্রাণঘাতী রূপ নেবে।
প্রশ্ন হচ্ছে:
- আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ কি এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত?
- আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ কি মানসিক ও সামাজিক (psycho-social) চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত, বা তাদের এ ধরনের সক্ষমতা আছে কি?
লাশ ব্যবস্থাপনা (Dead Body Management)—নীরব কিন্তু ভয়ংকর সংকট:
যদি মৃত্যুর সংখ্যা ২ লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যায়, তাহলে লাশ ব্যবস্থাপনা নিজেই এক দুর্যোগে পরিণত হবে:
- ঢাকায় নেই বৃহৎ পরিসরের মরচুরি সুবিধা
- নেই রেফ্রিজারেটেড স্টোরেজ
- নেই জরুরি দাফন/দাহ প্রটোকল
- প্রশিক্ষিত মানবসম্পদও অত্যন্ত সীমিত
- অসংগঠিত মরদেহ ব্যবস্থাপনা রোগ ছড়ানো, মানসিক ট্রমা এবং অস্থিরতা তৈরি করতে পারে।
- এক্ষেত্রেও প্রশ্ন থেকেই যায়—সিটি করপোরেশন কি এ ধরনের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সক্ষমতা রাখে?
ধ্বংসাবশেষ অপসারণ (Debris Management)—এক বহুবছরের জাতীয় চ্যালেঞ্জ
ধসে যাওয়া ভবনের সম্ভাব্য মোট ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে হাজার ট্রিলিয়ন টনেরও বেশি। এই বিপুল ওজন ও আয়তনের ধ্বংসাবশেষ রাজধানীসহ দেশের প্রধান সব সড়ককে সম্পূর্ণভাবে অচল করে দেবে।
এই ধ্বংসাবশেষ অপসারণে প্রয়োজন হবে—
- ৩০,০০০টি ২০-টনবাহী ট্রাক
- হাজার হাজার এক্সকাভেটর এবং হুইল-লোডার
- অবিচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থা
- একাধিক সমন্বিত কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার
- বৃহৎ আকারের ডাম্পিং জোন
এখানে স্বাভাবিকভাবেই একটি গুরুতর প্রশ্ন ওঠে—
বর্তমান জাতীয় লজিস্টিক সক্ষমতা কি এই মাত্রার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য পর্যাপ্ত?
কারণসমূহ :
- বর্তমানে দেশে এত বিপুল সংখ্যক ভারী যন্ত্রপাতি, ট্রাক, জ্বালানি সরবরাহব্যবস্থা, এবং রাস্তাঘাটের ধারণক্ষমতা নেই।
- সিরি করপোরেশন, সশস্ত্র বাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি–বেসরকারি সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলেও এটি হবে অত্যন্ত কঠিন, দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমুখী লড়াই।
- বিপুল ধ্বংসাবশেষ অপসারণে শুধু যন্ত্রপাতিই নয়, চাই সমন্বয়, প্রশিক্ষিত জনবল, জ্বালানি, পরিকল্পিত ডাম্পিং জোন, নিরাপত্তা, এবং বহু মাসের ধারাবাহিক অপারেশন।
জাতীয় জরুরি অপারেশন সেন্টারের অভাব
বাংলাদেশে নেই একটি পূর্ণাঙ্গ, ২৪/৭ ন্যাশনাল এমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার (NEOC)। এর অভাবে:
- যোগাযোগ বিলম্বিত হবে
- ত্রাণ বিতরণ বিশৃঙ্খল হবে
- ক্ষয়ক্ষতি মূল্যায়ন ধীর হবে
- সম্পদের সঠিক বণ্টন ব্যাহত হবে
- আন্তর্জাতিক সহায়তা সমন্বয় কঠিন হবে
আধুনিক কোনো দেশই NEOC ছাড়া বড় দুর্যোগ সামলাতে পারে না।
প্রশ্ন হচ্ছে: বাংলাদেশ সরকার কি জাতীয় জরুরি অপারেশন কেন্দ্র (NEOC) ছাড়াই দুর্যোগ মোকাবিলা করতে সক্ষম?
কমিউনিটি প্রস্তুতি—সামনের সারির অনুপস্থিতি
ঢাকায় নেই:
- স্থানীয় উদ্ধার দল
- ওয়ার্ড-ভিত্তিক কমান্ড পোস্ট
- Family জরুরি পরিকল্পনা
বাস্তবে জীবনের বড় অংশই উদ্ধার করেন প্রতিবেশীরা, কিন্তু প্রস্তুতি না থাকলে সেই ক্ষমতাও অকেজো হয়ে পড়ে।
প্রশ্ন হচ্ছে: যেখানে ৭০%–৭৫% উদ্ধার কার্যক্রম সম্পন্ন হয় সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষদের দ্বারা, যারা সচেতনতা ও প্রস্তুতি ছাড়াই অংশগ্রহণ করে, শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবীরা থাকলে উদ্ধার কার্যক্রমের সাফল্য কতটা হতে পারে?
,আশ্রয় সংকট—যাওয়ার মতো নিরাপদ জায়গা নেই
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রতি ব্যক্তির জন্য ৯ বর্গমিটার উন্মুক্ত জায়গা দরকার। ঢাকায় রয়েছে barely ১ বর্গমিটার।
ভূমিকম্পের পর:
- ৩ কোটির বেশি মানুষ খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হবে
- পার্ক, মাঠ, স্কুল ১০–২০ গুণ বেশি ভিড়ে পরিণত হবে
- শৌচাগার, পানি, আলোকসজ্জা, নিরাপত্তা—কিছুই পরিকল্পিত নয়
- অসংগঠিত আশ্রয়কেন্দ্র প্রায়ই রোগ ছড়ানোর পাশাপাশি সহিংসতার ক্ষেত্র তৈরি করে।
প্রশ্ন হচ্ছে: সিটি কর্পোরেশন কি আশ্রয় ব্যবস্থার জন্য প্রস্তুত?
অর্থনীতি ও শিল্পখাত—এক রাতেই সম্ভাব্য ধস:
হাজার হাজার শিল্পকারখানা—বিশেষত পোশাক শিল্প—ধসে পড়তে বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে:
- লাখ লাখ শ্রমিক চাকরি হারাতে পারে
- রপ্তানি কমে যেতে পারে
- সরবরাহ শৃঙ্খল ভেঙে যেতে পারে
- অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় শহর ছাড়ার প্রবণতা বাড়াতে পারে
এত বড় দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশের ব্যবসা ধারাবাহিকতা পরিকল্পনা অত্যন্ত সীমিত।
প্রশ্ন হচ্ছে: এই মেগা-ভূমিকম্প মোকাবিলায় আমাদের সরকার ও ব্যবসায়িক সম্প্রদায় কতটা প্রস্তুত?
জনস্বাস্থ্য—দ্বিতীয় ঢেউয়ের বিপর্যয়
ভিড়, দূষিত পানি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছড়াতে পারে:
- কলেরা
- টাইফয়েড
- ডায়রিয়া
- ডেঙ্গু
- নিউমোনিয়া
নড়বড়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা এর চাপ সামলাতে পারবে না।
প্রশ্ন হচ্ছে: ভূমিকম্পের পর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগ কতটা প্রস্তুত?
রাজনৈতিক ও কৌশলগত অস্থিতিশীলতা
বৃহৎ দুর্যোগ সহজেই জাতীয় নিরাপত্তা সংকটে রূপ নিতে পারে। যথাযথ কনটিনিউটি প্ল্যান না থাকলে:
- জনমনে আতঙ্ক ছড়াতে পারে
- গুজব ও অপপ্রচার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে পারে
- আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে পারে
- জরুরি ক্ষমতা নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিতে পারে
- রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে: দুর্যোগের সময়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাজনৈতিক চাপ মোকাবেলায় আমাদের সরকার কতটা প্রস্তুত?
খাদ্য সংকট ও মূল্যস্ফীতি
রাস্তা বন্ধ, জ্বালানি সংকট ও সরবরাহ ব্যাহত হলে:
- নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হতে পারে
- বাজার ভেঙে পড়তে পারে
- মজুতদারি ও আতঙ্কে কেনাকাটা সংকট বাড়াতে পারে
এমন পরিস্থিতিতে জরুরি অ্যান্টি-প্রফিটিয়ারিং আইন, নিরাপদ সরবরাহ করিডোর এবং কৌশলগত খাদ্য ভান্ডার অত্যন্ত জরুরি।
প্রশ্ন হচ্ছে: মেগা-ভূমিকম্পের সময় ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কতটা প্রস্তুত?
যোগাযোগ ব্যবস্থা
মেগা দুর্যোগের সময় সকল লাইন, মোবাইল ও ইন্টারনেট যোগাযোগ বিধ্বস্ত হবে। মানুষ যোগাযোগহীনহয়ে পড়বে। ব্যাংক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ডেটা হারাতেপারে।
প্রশ্ন হচ্ছে:
- বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) কি কোনো ব্যাকআপ পরিকল্পনা রেখেছে?
- মোবাইল অপারেটররা কি মোবাইল যোগাযোগ বা এসএমএস ব্লাস্টিং সিস্টেমের জন্য কোনো ব্যাকআপ পরিকল্পনা রেখেছে?
গণঅগ্নিকাণ্ড: সেকেন্ডারি বিপর্যয়
ঢাকা একটি গ্যাসনির্ভর শহর। লক্ষ লক্ষ গ্যাস–সংযোগ, এলপিজি সিলিন্ডার, বিদ্যুৎ ট্রান্সফরমার, ফ্যাক্টরি বয়লার—সব মিলিয়ে ভূমিকম্পের সাথে সাথে শতাধিক স্থানে একযোগে অগ্নিকাণ্ড ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব আগুন ছড়াতে সময় লাগে না, কিন্তু নিভাতে লাগবে অনেক ঘন্টা—পর্যাপ্ত পানি, রাস্তার অ্যাক্সেস বা ফায়ারফাইটিং সরঞ্জাম না থাকায়।
এভাবে ভূমিকম্প–পরবর্তী অগ্নিকাণ্ড মৃত্যু ও ক্ষতির হারকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।
এখন প্রশ্ন ওঠে—
- আমাদের গ্যাস ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় কি স্বয়ংক্রিয় (Auto Shut-Off) বন্ধকরণ ব্যবস্থা আছে?
- গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিভাগ কতটা প্রস্তুত ভূমিকম্পজনিত অগ্নিকাণ্ড মোকাবিলায়?
উপসংহার: অনিবার্য ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি
উপসংহারে বলা যায়, এই কাল্পনিক দৃশ্যপট স্পষ্ট করে দেয় যে বাংলাদেশ এখনো বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত নয়। ভূমিকম্প থামানো যায় না, কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, আধুনিক প্রযুক্তি, দক্ষ জনবল ও কমিউনিটি-ভিত্তিক প্রস্তুতি থাকলে ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো যায়। ঢাকার জনসংখ্যার ঘনত্ব, নির্মাণমানের দুর্বলতা, অব্যবস্থাপনা ও সীমিত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা—সব মিলিয়ে প্রমাণ করে যে একটি Mw 7.0+ ভূমিকম্প একদিনেই এই নগরীকে ইতিহাসের ভয়াবহতম বিপর্যয়ের একটি রূপ দিতে পারে।
প্রস্তুতির জন্য জরুরি হলো, কঠোর বিল্ডিং কোড প্রয়োগ, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের রেট্রোফিট, উদ্ধার সক্ষমতার বৃদ্ধি, শহর পরিকল্পনায় ভূমিকম্প–ঝুঁকি অন্তর্ভুক্তি, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার শক্তিশালী নকশা, জনসচেতনতা ও নিয়মিত মহড়া, এবং একটি কার্যকর জরুরি প্রতিক্রিয়া কাঠামো।
ঢাকার জন্য ভূমিকম্প কল্পনা নয়—একটি অনিবার্য ভবিষ্যৎ, যা এখনই প্রস্তুতি নিলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। সময় আছে—কিন্তু খুব বেশি নয়। আমরা কী প্রস্তুত হব, নাকি অপেক্ষা করব বিধ্বংসের?





