প্রতিবছর অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে তীব্র বায়ু দূষণের কবলে পড়ে ভারতের দিল্লির বাসিন্দারা। ধোঁয়াশাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে গোটা শহর। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সে প্রায় প্রতিদিনই বায়ুমান ছাড়ায় ৪০০। এতে গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় প্রশাসন। ব্যাহত হয় বিমান চলাচল।
শীতকালে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ পার্শ্ববর্তী হরিয়ানা ও পাঞ্জাব প্রদেশে খড় পোড়ানোর প্রথা। বহুবছর ধরে হেমন্তের ধান মাড়াইয়ের পর উচ্ছিষ্ট পুড়িয়ে আসছে কৃষকরা। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ খড় পোড়ানোয় কারণে সৃষ্ট ধোঁয়া বাতাসের সঙ্গে মিশে ছড়িয়ে দিল্লিসহ অন্যান্য রাজ্যে। এতে, মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের শিকার হন রাজ্যগুলোর বাসিন্দারা।
এছাড়াও যানবাহনের অতিরিক্ত ব্যবহার এবং নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বায়ুদূষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। দীর্ঘদিন ধরেই সমস্যা সমাধানে দিল্লি প্রশাসন নানা পদক্ষেপ নিলেও কার্যত পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই। এতে, গেল সপ্তাহে দূষণের জন্য দায়ী কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেন আদালত।
আরও পড়ুন:
পাঞ্জাব এবং হরিয়ানা রাজ্যের কৃষকদের ওপর স্যাটেলাইটে নজরদারি রাখা হচ্ছিল। নজরদারি এড়িয়ে কৃষকরা খড় পোড়াচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে এবং খড় পোড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
তবে সপ্তাহ পার না হতেই ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আদালত। বায়ু দূষণ রোধে খড় পোড়ানো ও অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া কিংবা ভবন নির্মাণের কাজ সাময়িক বন্ধ রাখার পরিবর্তে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান খুঁজতে রাজ্য সরকারগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সর্বোচ্চ আদালত।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বেঞ্চ বলছে, সাময়িক নিষেধাজ্ঞা বায়ুদূষণ কমাতে কার্যকরী কোনো ভূমিকা পালন করবে না, বরং এমন সিদ্ধান্তে কর্মহীন হয়ে পড়বে নির্মাণ কাজে জড়িত শ্রমিকেরা। এতে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়বে তারা। এছাড়াও, যানবাহন চলাচল সীমিত করলে প্রভাব পড়বে জনজীবনে, হারাবে স্বাভাবিক গতি।
এসব সমস্যা আমলে নিয়ে আগামী ১৯ নভেম্বরের মধ্যে বায়ুদূষণ ঠেকাতে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা অবহিত আদালতের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর আগে গেল ১১ নভেম্বর বায়ুদূষণরোধে একটি বৈঠক করেন দেশটির কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী। দূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে যথাযথ নির্দেশ দেয়ার কথাও জানান তিনি।




