বেশ কিছুদিন যাবত রাজনৈতিক দলগুলোর কথার লড়াইয়ের পর গণভোট কবে হচ্ছে, তা জানা গেলো প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণে। যদিও গণভোট আয়োজনের দিন নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ ছিল দৃশ্যমান। তবে এ ভাষণে শেষ পর্যন্ত বিরোধ মিটলো কি না, তা-ই জানার চেষ্টা করা হয়েছে।
একদিকে বিএনপির চাওয়া পূরণ হলেও ইসলামী সমমনা ৮ দল জাতীয় নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি ও গণভোটের দাবিতে রাজপথে নেমেছে। অন্যদিকে, পিআর নিয়ে বিএনপি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলেও আগামী সংসদে ভোটের অনুপাতে উচ্চকক্ষ গঠনের কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা।
জুলাই পরবর্তী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ফাটল ধরেছে, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে তা এবার আরও জটিল রূপ নেবে কি না, তাই নিয়ে তৈরি হয়েছে শঙ্কা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন প্রধান উপদেষ্টা তার ভাষণে চলমান বিভেদে ভারসাম্য আনতে চেয়েছেন।
সাংবাদিক ও কলামিস্ট হাসান মামুন বলেন, ‘সরকারের কাজে, বিশেষ করে ঐকমত্য কমিশনের কাজের শেষ দিকে তারা যে সুপারিশ দিয়ে বিদায় নিল, তাদের মেয়াদ শেষ হলো, তখন কিন্তু বিভ্রান্তি-বিভক্তি নতুন করে তৈরি হয়েছিল রাজনৈতিক অঙ্গনে। মনে হচ্ছিল একপক্ষের দিকে হেলে গেছে সরকার। তবে এ ভাষনে আবার সে জায়গা থেকে একটু সরে এসে একটা ভারসাম্যের জায়গায় আসার চেষ্টা করেছেন ড. ইউনূস, তার ভাষণ শুনে এটা আমার মনে হয়েছে।’
তবে যে দেশে এখনও ভোটারদের বৃহৎ একটা অংশ মার্কা দেখেই নিজেদের ভোট দিয়ে থাকেন সেখানে গণভোটের ব্যালটে সাংবিধানিক জটিল ইস্যু নিয়ে ৪ প্রশ্নের এক উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ কতটা যৌক্তিক—সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আরও পড়ুন:
হাসান মামুন বলেন, ‘এখানে গণভোটটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। অনেকে বলছেন যে, এভাবে তো গণভোট হয় না। আগে যেসব গণভোট হয়েছে একটা প্রশ্ন ছিল, একটা ইস্যু ছিল। কিন্তু এখানে তো অনেক ইস্যু, এখানে ৪৮টি সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত ইস্যু। তার মধ্যে ৩০টিতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত, বাকিগুলোতে ভিন্নমত। তো এগুলো নিয়ে কীভাবে গণভোট হবে? সবাই কীভাবে সব প্রশ্নে একমত হবে কিংবা ভিন্নমত হবে?—এসব প্রশ্ন তো আছেই। তো গণঅভ্যুত্থানের পরে একটা বিশেষ পরিস্থিতি দেশে বিরাজ করছে। এখানে আসলে বিশেষভাবেই সবকিছু হবে।’
একই দিনে দুই নির্বাচন সম্ভব তা আগেই নিশ্চিত করেছে ইসি। কিন্তু তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতিও নিতে হবে কমিশনকে। এমনটি মনে করেন নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি।
নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলি বলেন, ‘ইলেকশন কমিশনকে যে কাজটা করতে হবে, ভোটকেন্দ্রে যারা কাজ করবে, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। একইসঙ্গে তারা ভোটারকে দুটি ব্যালট ইস্যু করবে। গণনা করার সময় কিন্তু একসেট মানুষ দিয়ে হবে না, দুই ক্যাটাগরির জন্য দুই সেট মানুষ লাগবে। একটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গণনা করবে, আরেকটা গণভোট গণনা করবে।’
সাবেক এ অতিরিক্ত সচিব মনে করছেন একই দিনে গণভোট আয়োজন যেমন চ্যালেঞ্জিং হবে, একইসঙ্গে গণভোট বিষয়টা কী— সেটাও সাধারণ ভোটারদের বোঝাতে হবে, তা না হলে গণভোটের আসল উদ্দেশ পূরণ হবে না।
জেসমিন টুলি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ কিন্তু এ প্রশ্নগুলো সম্পর্কে খুব বেশি জানে, তা নয়। কিছু মানুষ জানে যারা এটা নিয়ে কথা বলে বা, যারা এটার সঙ্গে আছেন। তবে একেবারে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ এটা নিয়ে কিছুই জানে না, তাকে জানাতে হবে। এই জানানোর কাজটা রাজনৈতিক দলগুলো করতে পারে, সরকার করতে পারে, ইলেকশন কমিশনও কিছু করতে পারে তাদের ট্রেইনিং সেশন বা অন্য কোনো মাধ্যমে। মানুষকে না জানিয়ে যদি বলা হয়, তুমি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ তে উত্তরটা দাও, সেই নির্বাচন কোনো অর্থ বহন করে না।’
রাজনৈতিক মহলে অভিযোগ আছে এখন যা হচ্ছে, তার কিছু সংবিধান মেনে আবার কিছু সংবিধানের বাইরে গিয়ে। তবে এ সাবেক নির্বাচন কমিশনার মনে করেন নির্বাচিত সরকার জনগণের আস্থা পূরণ করতে পারলে এগুলো কোনোকিছু নিয়েই ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠবে না।





