দুবলার চরে জেলেদের আতঙ্ক; সরানো হতে পারে শুটকি পল্লি

শুটকি পল্লিতে শুটকি তৈরি করছেন দুই ব্যক্তি | ছবি: এখন টিভি
0

সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রতি বছর ৫ মাসজুড়ে চলে শুটকি প্রস্তুতের কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তা নানা প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় শুটকি। দুবলার চরের এ শুটকি ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে চলতি মৌসুমে সাগরে বেড়েছে ডাকাতের প্রবণতা, আতঙ্কিত রয়েছেন জেলেরা। এদিকে বন্য প্রাণীদের কথা চিন্তা করে ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সংরক্ষিত বন থেকে শুটকি পল্লি সরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে বন বিভাগ।

ভোর হতে না হতেই সমুদ্র থেকে মাছ ধরে তীরে ফিরছেন জেলেরা। ছুটছেন শুটকি পল্লির দিকে। সমুদ্র থেকে আনা এই মাছগুলোই পরিণত হবে শুটকিতে।

নভেম্বরের শুরু থেকেই শুরু হয় শুটকি তৈরির মৌসুম। সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় ট্রলার আর শুটকি সরঞ্জাম নিয়ে হাজির হন মহাজনরা। নির্ধারিত জায়গায় বাঁশ খুঁটির চালা বানিয়ে মাছের অপেক্ষায় থাকেন তারা।

সুন্দরবনের দুবলার চরে শুটকি পল্লিতে দলে দলে শ্রমিক কাজ করেন। কেউ মাছ ধরেন, কেউ বাছাই করেন, কেউ ব্যস্ত শুকানোর কাজে। কাঁচা মাছ শুকাতে সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ দিন। ২০১৮ সালের পর বেশ কয়েক বছর জলদস্যুর তৎপরতা না থাকলেও চলতি মৌসুমে সেই আতঙ্কে জেলেরা।

জেলেরা জানান, প্রায় ৪০ জন এক জায়গায় কাজ করে। তারা ডাকাতের আতঙ্কে থাকেন সবসময়।

বঙ্গোপসাগরে জেলেদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োজিত রয়েছেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সদস্যরা। সাগরে জলদস্যুদের প্রতিহত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানায় কোস্টগার্ডের কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন:

কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, ‘আমাদের কোস্ট গার্ডদের জেলেদের যে আশঙ্কা বলেছেন এ ব্যাপারে আমরা অবগত আছি। এরইমধ্যে সুন্দরবনে আমরা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেছি।’

মূলত আলোরকোল, মাঝেরকেল্লা, নারকেল বাড়ীয়া, শেলারচর ও মেহেরআলীর চরে তৈরি হয় লইট্টা, তেলফ্যাসা, ছুরি, রূপচাঁদা ও চাকা চিংড়ির শুটকি। প্রতি কেজি শুটকি মানভেদে বিক্রি হয় ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক যুক্ত থাকেন এ কর্মযজ্ঞে। সুপেয় পানি, সেনিটেশন সমস্যাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে পাঁচ মাস ধরে সমুদ্রতীরের শুটকি তৈরির যজ্ঞে ব্যস্ত থাকেন শ্রমিকরা।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘যদিও এটি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এটি বনের জন্য একটি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বনে শুটকিকে কেন্দ্র করে বিপুল পরিমাণে লোকজন এবং জেলে বাস করে।

প্রতি মৌসুমে এখান থেকে প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার শুটকি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্রি হয়। কোনো কেমিকেল ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়ায় দুবলার চরের শুটকির চাহিদাও অনেক বেশি।

সুন্দরবন দুবলারচর ট্রান্সপোর্ট সমিতি সদস্য শিব বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের মাছের মান বেশি ভালো। আমরা মাছগুলো উঁচুতে শুকাই যার কারণে বালু লাগে না।’

এদিকে দুলারচরের এই শুটকি পল্লি দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখলেও ক্ষতি করছে সুন্দরবনের। ৫ মাসের সময়ে মানুষের ফেলা বর্জ্য নষ্ট করছে বনের ভারসাম্য। সংরক্ষিত বনাঞ্চলে গড়ে ওঠা বাজার ও মানবচাপে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সুন্দরবন। তাই দ্রুত পল্লি সংরক্ষিত বন থেকে সরিয়ে না নিলে বড় হুমকির মুখে পড়বে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।

এফএস