শুধু মানুষ নয়, দুই বছরে ফিলিস্তিনে লাখ লাখ জলপাই গাছ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাঈল

জলপাই গাছ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল
জলপাই গাছ গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল | ছবি: সংগৃহীত
0

গেল দুই বছরে শুধু হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকেই হত্যা করেনি ইসরাইল, গুঁড়িয়ে দিয়েছে দেশটির মানুষের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করা লাখ লাখ জলপাই গাছ। গাজা যুদ্ধের আগে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজার বিভিন্ন অংশের প্রায় ১ লাখ পরিবারের জীবিকার উৎস ছিল জলপাই চাষ। মূলত তেল উৎপাদনের উদ্দেশে এটি চাষ করা হলেও, এর সঙ্গে মিশে আছে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনির আবেগ ও স্মৃতিকথা।

প্রায় তিন বছর আগের ভিডিও ফুটেজ। উজ্জ্বল রোদের আলোয় ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের জলপাই বাগানগুলোতে পরিচর্যায় কাজ করছে ফিলিস্তিনিরা। তখনও উপত্যকাটিতে বর্বর আগ্রাসন শুরু করেনি ইসরাইলি বাহিনী। তবে যুদ্ধ এ অঞ্চলটিকে এতোটাই বিধ্বস্ত করেছে যে পুরো ফিলিস্তিনে খুঁজে এ দৃশ্য বিরল।

মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশটির কাছে জলপাই চাষ শুধু অর্থ উপার্জনের উৎসই নয়, আবহমান কাল ধরে ফিলিস্তিনিদের কাছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক। জলপাই দিয়ে তৈরি হরেক রকমের খাবার ছাড়া দেশটির পরিবারগুলোর খাবারের টেবিলগুলো যেন পূর্ণতাই পায় না। ফিলিস্তিনি ঐতিহ্য অনুযায়ী, প্রতিটি পরিবারে একজন দাদী বা বয়স্ক ব্যক্তি থাকেন যাকে স্থানীয় ভাষায় টেটা বলে, তারা জলপাইয়ের দিয়ে তৈরি করেন নানান খাবার। আর তারাই বছরের পর বছর ধরে পরবর্তী প্রজন্মকে জলপাই চাষের গল্প শুনিয়ে আসছেন।

আল-জাজিরা জানায়, এক লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি পরিবার এই জলপাই চাষের মাধ্যমে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু ২০২৩ সাল থেকে ইসরাইলি বাহিনী শুধু হাজার হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিদেরই হত্যা করেনি, উপড়ে ফেলেছে অধিকৃত পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকার লাখ লাখ জলপাই গাছ। গেল দুই বছরে গাজার প্রায় ১১ লাখ জলপাই গাছ ধ্বংস করে তারা।

আরও পড়ুন:

গাজার বাসিন্দারা বলেন, ইসরাইলের আগ্রাসন আমাদের বাগানগুলোকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কারণ ইসরাইল বুলডোজার দিয়ে আমাদের সকল গাছ উপড়ে ফেলেছে।

গাজা যুদ্ধের আগে হাজার হাজার টন জলপাই তেল উৎপাদন করত ফিলিস্তিনের কারখানাগুলো। কিন্তু যুদ্ধের কারণে থমকে গেছে কার্যক্রম। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে যতটুকু উৎপাদন চলছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তেল উৎপাদন সংশ্লিষ্টরা বলেন, তেল উৎপাদনের সকল অবকাঠামো ধ্বংস করে ফেলেছে ইসরাইলি বাহিনী । আমাদের কারখানায় ২০ থেকে ৩০ টন তেল উৎপাদন হতো। যেগুলো আন্তর্জাতিকভাবে মানসম্মত ছিল এবং দেশের চাহিদা মিটিয়ে এগুলো গালফভুক্ত দেশগুলোতে রপ্তানি হতো।

মূলত তেলের আশায় জলপাই চাষ করেন ফিলিস্তিনিরা। মোট ফসলের প্রায় ৯০ শতাংশ ব্যবহৃত হয় তেল উৎপাদনে। এছাড়া, আচার, সাবান ও জলপাই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি হয় নানা কারুশিল্প সামগ্রী।

ফিলিস্তিনে জলপাই চাষের জন্য উর্বর মৌসুম হলো অক্টোবর। স্থানীয় ভাষায় এটিকে বলে মাওসিম আল-জায়তুন। সাধারণত সেপ্টেম্বরের শুরুতে বৃষ্টির পরপরই প্রস্তুতি শুরু করে কৃষক পরিবারগুলো। নভেম্বর পর্যন্ত চলে চাষাবাদ।

জলপাই গাছ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুতে বৃদ্ধি পায় এবং এগুলো খরা সহনশীল হয়ে থাকে। জলপাই গাছ বিশ্বের প্রাচীনতম গাছের একটি এবং এগুলো কয়েক শতাব্দী ধরে টিকে থাকে। ফিলিস্তিনের অনেক জলপাই গাছ হাজার বছর বয়সী।

ইএ