কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক অপারেশন নিয়ে অনিশ্চয়তা!

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ চলমান
কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাজ চলমান | ছবি: এখন টিভি
1

পর্যটন নগরী কক্সবাজার বিমানবন্দরের আন্তর্জাতিক অপারেশন নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। রানওয়ে ৬ হাজার ৭৭৫ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার ফুট করার কাজ শেষ। কিন্তু ১১ হাজার বর্গফুট আয়তনের নতুন টার্মিনাল ভবন নির্মাণ পুরোপুরি শেষ হয়নি এখনো। প্রস্তুতি না থাকলেও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে জারি করা হয় প্রজ্ঞাপন। পরে ১২ দিনের মধ্যে তা আবার স্থগিত করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ—বেবিচক।

আধুনিক রানওয়ে, প্রশস্ত টার্মিনাল আর অত্যাধুনিক যাত্রী সেবা সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক এই বিমানবন্দর। গত ১২ অক্টোবর কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে প্রজ্ঞাপন দেয় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। তারপর সেই মাসেই কক্সবাজার থেকে ঢাকা হয়ে কলকাতা ফ্লাইট চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছিল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। কিন্তু ১২দিনের মাথায়ই স্থগিত করা হয় সেই সিদ্ধান্ত।

একাধিক সূত্রে জানা যায়, বিদেশি কোনো এয়ারলাইন এখনই কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালাতে আগ্রহ দেখায়নি। কারণ পর্যাপ্ত যাত্রীসংখ্যা এবং বাণিজ্যিক সুবিধার নিশ্চয়তা এখনও মেলেনি এই বন্দরে।

এছাড়া আন্তর্জাতিক রুট পরিচালনা করতে হলে জ্বালানি সরবরাহ, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সাপোর্টের খরচ ঢাকায় যা হয়, কক্সবাজারে তা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করে অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন।

অ্যাভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) মফিজুর রহমান বলেন, ‘এখানে একা নেমে রিফিল করে যাবে। অত্যন্ত খোঁড়া যুক্তি। আজকালকার দুনিয়ায় কেউ কক্সবাজারের মতো জায়গায় নেমে রিফিল করে যাবে না। আমাদের দেশে যেখানে তেলের দাম সবচেয়ে বেশি সেখানে তো প্রশ্নই ওঠে না। সুতরাং এ পুরো প্রজেক্টটাই ছিলো একটা ধাপ্পার ওপর তৈরি করা।’

দেশিয় এয়ারলাইনগুলোর পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, কক্সবাজার থেকে আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রা শুরু করলে খরচ এতটাই বেড়ে যাবে যে, টিকিটের দাম সাধারণ পর্যটকের নাগালের বাইরে চলে যাবে। তাছাড়া এই বন্দরে আন্তর্জাতিক অপারেশন শুরু করতে হলে আরও কিছু অবকাঠামোগত প্রস্তুতি দরকার বলেও মনে করেন তারা।

আরও পড়ুন:

ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের (জনসংযোগ) মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘বাহিরে ইনফাট্রাকচার যদি এভাবে ডেভেলপ না করা হয় আপনি দেখেন শুধুমাত্র কক্সবাজারে রিসোর্টের ডেভেলপমেন্ট আমরা দেখেছি। বাকি আর কোনো ডেভেলপমেন্ট কি কক্সবাজার আছে? বিদেশি এয়ারলাইনসকে আকর্ষিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, বিদেশি এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করে তারা যেন সরাসরি ফ্লাইট কক্সবাজার ল্যান্ড করাতে পারে।’

এয়ার এস্ট্রার সিইও ইমরান আসিফ বলেন, ‘ফরেন কেরিয়ারস বা লোকাল কোরিয়ারস তারা কখন কোথায় কি ধরনের মার্কেট নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারবেন এটার একটা ফার্ম প্ল্যান না জেনে ইন্টারন্যাশনাল ডিক্লেয়ারেশন দেয়াটা হয়তো একটু প্রিম্যাচিউর ছিলো। মধ্যপ্রাচ্যের যে ট্রাফিকটা তার একটা বড় অংশ অরজিনেট করে ফ্রম চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম অলরেডি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট আছে। চট্টগ্রামের লোকজন কক্সবাজার গিয়ে ওখান থেকে ফ্লাইট নিয়ে যাবে এটা আশা করাটা ফিজিবল নয়।’

এসব জটিলতা নিয়ে কেনই বা তাড়াহুড়ো করে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিলো আর কেনই বা সেই সিদ্ধান্ত থেকে এত দ্রুত সরে আসতে হলো এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্যই করতে চাননি সিভিল অ্যাভিয়েশন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া ছিলো পুরোপুরি অযৌক্তিক।

বিমান বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদ উল আলম বলেন, ‘এ এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহার করার জন্য কোনো এয়ারলাইনস কি কখনো কোনোরকম আগ্রহ প্রকাশ করেছে কি না? আমার জানামতে কোনো এয়ারলাইনস এমনকি বিমান ও কিন্তু এ এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহারের কোনোরকম আগ্রহ প্রকাশ করে নি। শুধু করার জন্য করলেই তো হবে না, এটাকে কমারশিয়ালি ভায়াবল করতে হবে।’

কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুরোপুরি চালু হলে দেশের পর্যটন খাতে নতুন দিগন্ত উন্মোচনের আশা করা হয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা নিয়ে জটিলতা কাটাতে না পারলে, সেই স্বপ্ন আপাতত বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

ইএ