রাজশাহী হাইটেক পার্কে বাড়ছে বিনিয়োগ; সরকারি সহযোগিতা চান উদ্যোক্তারা

সিলিকন টাওয়ার | ছবি: এখন টিভি
1

স্টার লিঙ্ক, অগ্নি সিস্টেম ও ব্রাকসহ দেশি-বিদেশি একাধিক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করছে রাজশাহী হাইটেক পার্কে। তাতে পার্ক ঘিরে বাড়ছে সম্ভাবনা। তবে ৫ আগস্টের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অবকাঠামোর মেরামত ও সরকারী সহযোগিতা চান ব্যবসায়ীরা। উদ্যোক্তা বান্ধব পরিবেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে পার্কের সম্পর্ক তৈরির দাবি বিশেষজ্ঞদের। লোকসানে চলতে থাকা পার্কটি দ্রুতই লাভবান হবে বলে প্রত্যাশা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের।

৩১ একরের রাজশাহী হাইটেক পার্ক। যাত্রা শুরুর পর ২০২৪ এর ৫ আগস্টের পর থেকে চলে স্থবিরতায়। তবে সম্প্রতি তা, কাটিয়ে বিনিয়োগে নতুন গতি পেয়েছে পার্কটি।

হাইটেক পার্কজুড়ে ৮টি বাণিজ্যিক প্লটের সবকটিই ছিলো ফাঁকা। গেল মাস থেকে একে একে বিনিয়োগ এসেছে সেখানে। ৪০ বছরের জন্য এক একরের প্লটে গ্রাউন্ড স্টেশন নির্মাণ করেছে মার্কিন প্রতিষ্ঠান স্টারলিঙ্ক। পাশের প্লট বরাদ্দ নিয়েছে দেশিয় আইটি প্রতিষ্ঠান অগ্নি সিস্টেম। এছাড়া ২ একরের ব্র্যাক-আইটি, আর ১২তলা অত্যাধুনিক সিলিকন টাওয়ারে ২ হাজার ৪০০ বর্গফুট জায়গা নিচ্ছে প্রাণ-আরএফএলসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। তাতে দ্রুতই ব্যস্ত হয়ে উঠবে হাইটেক পার্ক।

রাজশাহী হাইটেক পার্ক উপ-পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘এখানে এখন সাতটি কোম্পানি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সেখানে কোনো ফাকা স্পেস আমাদের নেই। ১২ তলা সিলিকন টাওয়ারে আমাদের ১৯টি কোম্পানিকে বরাদ্দ দিয়েছি। যাদের মধ্যে অনেকেই কাজ শুরু করেছে। অনেকেই ডেকোরেশনের কাজ করছে। সবচেয়ে বড় যেটি অ্যাচিভমেন্ট হলো স্টারলিংকের একটি গ্রাউন্ড স্টেশন করা হয়েছে। এবং এক একর জমি তাদের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।’

তবে হাইটেক পার্কের বর্তমান ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিরাপত্তা, উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি আর প্রতিষ্ঠানটির ব্র্যান্ডিং-এ পিছিয়ে আছে কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি গেল পাঁচ আগস্টের ঘটনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে না দেয়ায় বড় বিনিয়োগে ঝুঁকি মনে করছেন তারা।

আরও পড়ুন:

হাইটেক পার্কের ব্যবসায়ীদের একজন বলেন, ‘আমার কাছে কনসার্ন হলো সিকিউরিটি কনসার্ন। হাইটেকের বাউন্ডারিটি এখনও কোথাও না কোথাও অরক্ষিত। আরেকটি বিষয় হলো এখানে সিসিটিভি সিস্টেম আর এন্ট্রি এক্সিট নতুন করে করতে হবে।’

এদিকে, হাইটেক পার্কের উপ-পরিচালক বলছেন, নষ্ট লিফট, নিরাপত্তায় কট্রোলরুম ও অন্যান্য সুবিধার জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে মন্ত্রণালয়ে।

রাজশাহী হাইটেক পার্ক উপ-পরিচালক গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘সরকার ব্যবসা করার জন্য শুধু নয়, এখানে একটি সেক্টরকে দাঁড় করানোর জন্য কাজ করছে। আমাদের আইটি ইন্ডাস্ট্রিও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার জন্য সময় দরকার।’

আইটি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইটেক পার্কের কর্মীদের মিল ও নিরবচ্ছিন্ন পাওয়ার সাপ্লাই নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি দক্ষ কর্মী পেতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করতে হবে বলছেন তারা।

রাজ আইটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এস এম আক্তারুজ্জামান মাসুদ বলেন, ‘সিকিউরিটি ক্যামেরা নেই সেগুলো দেয়া যেতে পারে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের সাপ্লাই এখনও নিশ্চিত করা হয়নি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সিএসই বিভাগ সভাপতি বলেন, ‘হাইটেক পার্কের মধ্যে যতগুলো ফার্ম আছে, অন্যান্য যে ফার্মগুলো বাহিরে আছে, একটি জায়গাটি তৈরি করতে পারি, আমরা চাই তারা আমাদের ইনভাইট করুক, তাহলে তাদের স্টুডেন্টদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হয়ে যাবে।’

রাজশাহী হাইটেক পার্কে, বর্তমানে ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ বাবদ আয় হয় প্রায় দুই লাখ টাকা, ব্যয় প্রায় ৮ লাখ। আর প্রতিমাসে হাইটেক পার্ক ভর্তুকি ৬ লাখ। নভেম্বরের পর থেকে এর অনেকটা কাটিয়ে উঠবে বলছে প্রতিষ্ঠানটি।

রাজশাহী হাইটেক পার্কে যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান গুলো এখন কাজ করছে, তারা বলছে শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে প্রতিনিয়ত এক লাখের বেশি শিক্ষার্থী হন্নে হয়ে কাজ খুঁজছেন। যেখানে কি না, এ প্রতিষ্ঠানটিতেই ১৪ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান গড়ে তোলা খুবই সম্ভব। তবে পাঁচ আগস্টের পরে এ প্রতিষ্ঠানটি যে ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা মেরামত করতে হবে সবার আগে।

এফএস